নির্ভেজাল ওষুধ পাওয়াও নাগরিকের মৌলিক অধিকার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ১৬, ২০২৩, ০৬:০২ পিএম

নির্ভেজাল ওষুধ পাওয়াও নাগরিকের  মৌলিক অধিকার

ছবি: সংগৃহীত

ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে ১০৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়। 

বিনা মূল্যে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা না পাওয়া গেলে ব্যক্তি তার জীবন তথা বেঁচে থাকার অধিকার হতে বঞ্চিত হতে বাধ্য। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির বিনা মূল্যে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া তার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। তেমনি বিনা মূল্যে ভেজালমুক্ত তথা নির্ভেজাল ওষুধ পাওয়াও প্রতিটি নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট  এসব কথা বলেন।

রায় অনুযায়ী ১৯৯১ সালে ৭৬ জন এবং ২০০৯ সালে ২৮ শিশুর মৃত্যু ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কঠিন দায় উল্লেখ করে ৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্ট বলেন, একই সাথে ওষুধে ভেজাল মিশ্রণ বন্ধে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(গ) মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। 

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের আদলে বাংলাদেশের জনগণের চিকিৎসা সেবা ও অবকাঠামো তৈরি করার পরামর্শ প্রদান করেন হাইকোর্ট।

রায়ের অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে পাঠানোর জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২০২২ সালের ২ জুন ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে ১০৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবার প্রতি ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে সে সময় রায় দেন।

১০৪ শিশু মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে জনস্বার্থে রিট করা হয়। ওই সময় প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে রুল নিষ্পত্তি করে গত বছর রায় দেন আদালত। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

রায়ে আদালত বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও অবকাঠামো প্রশংসনীয় স্তরে উন্নীত হয়েছে। আমাদের ওষুধ শিল্প দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে।

হাইকোর্ট বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে ওষুধ নিয়মিত আমদানি করছে। অনেক প্রতিবেশী দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত পড়ালেখা করতে আসছে। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশের বর্তমান বাস্তব অবস্থা এই যে, উন্নত ও সুচিকিৎসা কেবলমাত্র ধনী এবং উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমিত। 

মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তসহ দেশের আপামর সাধারণ জনগণ বলতে গেলে উন্নত চিকিৎসা ও সু-চিকিৎসা হতে বঞ্চিত। তারা কেবল নামেমাত্র সামান্য চিকিৎসা পায়।

হাইকোর্ট আরও বলেন, দেশের আপামর জনসাধারণের করের টাকায় সাংবিধানিক পদাধিকারী ব্যক্তিসহ সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিদেশে হরহামেশা উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এমনকি বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ের নেতা ও নেত্রীদেরও আমরা দেখি হরহামেশা বিদেশে চিকিৎসার জন্য গমন করতে। কিন্তু সাধারণ জনগণের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের ন্যূনতম সুযোগ নেই।

প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ, যারা সংবিধান মোতাবেক এ দেশের মালিক, তারা কিন্তু বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে চান না। তারা চান দেশে বিদেশের মতো উন্নত চিকিৎসা সুবিধা থাকুক সকলের জন্য।

Link copied!