বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য শ্রীলংকা এক সতর্কবার্তা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১৮, ২০২২, ০৬:৪০ পিএম

বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য শ্রীলংকা এক সতর্কবার্তা

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাচ্ছে একের পর এক ঘটনা। দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা নিয়ে উদ্বিগ্ন সারা বিশ্ব। উচ্চমাত্রায় ঋণগ্রস্ত এশিয়ার অন্য দেশগুলোর জন্য শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতিকে এক সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে লাওস, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

শনিবার আইএমএফ প্রধান বলেন, এশিয়ার অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও চার মাস ধরে টেকসই মূলধনের বহিঃপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এতে তাদের উন্নত অর্থনীতিকে ছোঁয়ার স্বপ্ন ঝুঁকিতে পড়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে বিপুল পরিমাণ ঋণ করেছে শ্রীলঙ্কা। গত মাসে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধের ক্ষেত্রে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গত ২০ বছরে দেউলিয়া হওয়া প্রথম দেশ এটি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, মুনাফার হার বৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, উচ্চমাত্রার ঋণ ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মতো এসব বৈশ্বিক প্রতিকূলতা প্রভাব ফেলতে পারে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর অর্থনীতিতেও।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক অ্যালান কিনান বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় সৃষ্ট সংকটের পেছনে চীনের দায় রয়েছে। দেশটি এমন সব ব্যয়বহুল অবকাঠামো প্রকল্পকে উদ্বুদ্ধ করছে, যার বদলে কোনো বড় ধরনের অর্থনৈতিক অর্জন আসছে না।’

বাংলাদেশ সম্পর্কে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত মে মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার ৭ দশমিক ৪২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ায় জরুরি নয়, এমন পণ্য আমদানি বন্ধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স পেতে বিভিন্ন বিধান শিথিল করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের বিদেশে ভ্রমণও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের বিশ্লেষক কিম এং তান বিবিসিকে বলেন, ‘আমদানি আয় ও রপ্তানি ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ঘাটতিতে থাকা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সরকারকে ভর্তুকি বাড়াতে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হবে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য এরই মধ্যে আইএমএফ ও অন্য দেশের সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে। বাংলাদেশকে সরকারি ব্যয়ের বিষয়টিকে পুনঃঅগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ভোক্তা পর্যায়ে কেনাকাটার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে।

এদিকে, ৭৫ লাখের বেশি মানুষের বসতি সংবলিত পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওস। দেশটি কয়েক মাস ধরে বিদেশি ঋণ শোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর দেশটিতে তেলের দাম বেড়েছে, বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দামও।

জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ও রেলওয়ের মতো বড় বড় প্রকল্পগুলোর জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাওসকে প্রচুর পরিমাণে ঋণ দিয়েছে চীন। লাওসের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের বরাতে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, গত বছর এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার মূল্যের ৮১৩ প্রকল্পে একাই অর্থায়ন করেছে বেইজিং। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২১ সালে লাওসের সরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল দেশটির মোট জিডিপির ৮৮ শতাংশ। এ ঋণের প্রায় অর্ধেকই চীনের কাছ থেকে নেওয়া।

পাকিস্তানে মে মাসের শেষ থেকে পাকিস্তানে জ্বালানির দাম প্রায় ৯০ শতাংশ বেড়েছে। সরকার জ্বালানি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার পর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। দেশটি এখন তাদের খরচের লাগাম টানতে চাইছে। পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। শ্রীলঙ্কা ও লাওসের মতো পাকিস্তানেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। গত বছরের আগস্ট থেকে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।

অন্যদিকে, মালদ্বীপে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি ঋণের পরিমাণ বাড়তে দেখা গেছে। এ ঋণের পরিমাণ তাদের জিডিপির তুলনায় ১০০ শতাংশের বেশি। পর্যটন খাতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল এ দেশের অর্থনীতিতেও করোনা মহামারির প্রভাব পড়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, দ্বীপ রাষ্ট্রটি সুনির্দিষ্টভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিজনিত ঝুঁকিতে আছে। কারণ, দেশটির অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য নেই।

২০২৩ সালের শেষ নাগাদ মালদ্বীপ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যান।

Link copied!