সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২, ১০:১২ পিএম
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাককে হারিয়ে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। বাংলাদেশি সময় বিকেল ৫টা ৩৯ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লিজ ট্রাসের নাম ঘোষণা করে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে কয়েক সপ্তাহব্যাপী প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরে সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকের বিরুদ্ধে জয় পান ট্রাস।
লিজ ট্রাসের পুরো নাম মেরি এলিজাবেথ ট্রাস। তাঁর আইডল হলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। থ্যাচারের আদর্শ তাকে প্রেরণা যোগায় বলে গণমাধ্যমে একাধিক বার তিনি বলেছেন। সেই স্কুলজীবন থেকে থ্যাচারের অন্ধভক্ত তিনি। শৈশবে লিজ ট্রাসের স্কুলে একবার জাতীয় নির্বাচনের আদলে সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল। লিজ ট্রাসের বয়স তখন ৭। ওই নির্বাচনে ট্রাস মার্গারেট থ্যাচারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
ছোটবেলার সেই স্মৃতি মনে করে লিজ ট্রাস একবার বলেছিলেন, ‘‘আমি ওই সুযোগ লুফে নিয়েছিলাম এবং ভোটারদের উদ্দেশ করে আবেগঘন বক্তৃতা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত একটি ভোটও পাইনি। এমনকী আমি নিজেই নিজেকে ভোট দেইনি।”
লিজ ট্রাস এখন ৪০ বছরে পা দিয়েছে। তবে থ্যাচারকে অনুসরণ করেই তিনি আজ কনজারভেটিভ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিচ্ছেন চলতি সপ্তাহে।
স্কুল শেষ করে ট্রাস অক্সফোর্ডের মেরটন কলেজে পড়াশোনা করেছেন। এই কলেজে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লিবারেল ডেমোক্র্যাটসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৯৬ সালে স্নাতক হওয়ার পর কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন। থিঙ্ক ট্যাঙ্ক রিফর্মের ডেপুটি ডিরেক্টর হওয়ার আগে তিনি শেল অ্যান্ড ক্যাবল অ্যান্ড ওয়্যারলেসে কাজ করেছিলেন।
তার চার বছর বয়সে পরিবারটি স্কটল্যান্ডে চলে আসে। ট্রাস পেসলি, রেনফ্রুশায়ারের ওয়েস্ট প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করেন, তার পরে রাউন্ডহে স্কুলে। পরবর্তীতে তিনি মারটন কলেজ, অক্সফোর্ড-এ দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি পড়েন, ১৯৯৬ সালে স্নাতক হন।
ট্রাস লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সক্রিয় ছিলেন। তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি লিবারেল ডেমোক্র্যাটস-এর সভাপতি এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট যুব ও ছাত্রদের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশুদ্ধ গণিতের এমেরিটাস অধ্যাপক বাবা এবং নার্স, শিক্ষক ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অভিযানের সদস্য মায়ের সন্তান লিজ ট্রাস বাবা-মায়ের মতো বামপন্থী ধারণায় বড় হতে থাকেন।
পরে আদর্শ ত্যাগ করে ১৯৯৬ সালে কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন লিজ ট্রাস।২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ট্রাস যখন রক্ষণশীল হিসাবে সংসদে নির্বাচনে দাঁড়ান, তখন তার মা তার পক্ষে প্রচারণা চালাতে রাজি হন। তবে তার বাবা তা করতে অস্বীকার করেন। সংসদ সদস্য হয়ে একজন ব্যাকবেঞ্চার হিসাবে, তিনি শিশু যত্ন, গণিত শিক্ষা এবং অর্থনীতি সহ বেশ কয়েকটি নীতির ক্ষেত্রে সংস্কারের আহ্বান জানান।
লিজ ট্রাস ২০২১ সাল থেকে পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়ন বিষয়ক সেক্রেটারি এবং ২০১৯ সাল থেকে নারী ও সমতা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দক্ষিণের সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন ২০১০ সাল থেকে পশ্চিম নরফোক। তিনি ডেভিড ক্যামেরন, থেরেসা মে এবং বরিস জনসনের অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রিসভা পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অর্থনৈতিকভাবে নব্য উদারনৈতিক এবং সামাজিকভাবে রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির সাথে যুক্ত ছিলেন।
ব্রেক্সিট ইউ-টার্ন
২০১৬ সাল যুক্তরাজ্যের রাজনীতির জন্য ঐতিহাসিক একটি বছর। সে বছরই যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা বা না থাকা নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। যা ব্রেক্সিট নামে পরিচিত। ট্রাস বেক্সিটের বিপক্ষে ছিলেন। তিনি ইইউ-র সঙ্গে থেকে যাওয়ার পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন।
ওই সময় ‘দ্য সান’ পত্রিকায় একটি কলামে তিনি লিখেছিলেন, ব্রেক্সিট হলে ‘তিনটি হৃদয়বিদারক ঘটনা একসঙ্গে ঘটবে। ইইউতে পণ্য বিক্রি করতে গেলে আরও নিয়ম, আরো ফর্ম এবং আরও দেরি হবে’।
গণভোটে তার পক্ষ হেরে যায় এবং ট্রাসও পক্ষ পরিবর্তন করে ব্রেক্সিটের পক্ষে চলে আসেন। বলেন, ‘‘ব্রেক্সিট প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মের মন্ত্রিসভায় তিনি বিচারমন্ত্রী ছিলেন। এরপর তিনি ট্রেজারি মন্ত্রী হন। ২০১৯ সালে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ট্রাস আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী ও পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন।
বর্তমান নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস নিজের দলের মধ্যেও সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সরব থাকা ট্রাস বরিস জনসনের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে, যখন দলের অনেক নেতা বরিস জনসনের বিরোধিতা করে পদত্যাগ করছিলেন, তখন লিজ ট্রাস তাঁর সমর্থনে দাঁড়িয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে লিজ ট্রাস বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জননী।