বিজেপি তাঁকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ট্যাগ থেকে নুপুর শর্মা বিজেপির নাম সরাননি। নিজেকে বিজেপি নেত্রী হিসেবেই পরিচয় দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ইসলামিক দেশগুলো যাই বলুক, দমতে নারাজ নুপুর। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমার ঠাকুরের সম্পর্কে বলেছে। তাই বলেছি।’ রীতিমতো সোজাসাপটা হিন্দু নেত্রী নুপুর শর্মা।
এই ব্যাপারে সাসপেন্ড হওয়া বিজেপি নেত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘আমি গত কয়েক দিন ধরেই টিভির বিতর্কে অংশ নিচ্ছিলাম। সেখানে প্রতিদিনই আমার আরাধ্য শিবকে অপমান করা হচ্ছিল। আমার সামনেই বলা হচ্ছিল, ওটা শিবলিঙ্গ নয়, আসলে ফোয়ারা। দিল্লির প্রতিটি ফুটপাথে অসংখ্য শিবলিঙ্গ পাওয়া যায়। যা-ও, গিয়ে পুজো কর। আমার সামনেই বারবার এভাবে মহাদেবের অপমান আমি সহ্য করতে পারিনি। আমি তাই রাগের মাথায় কিছু কথা বলেছি। যদি আমার কথায় কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে, তো আমি আমার কথা প্রত্যাখ্যান করলাম। কাউকে কষ্ট দেওয়ার কোনও ইচ্ছে আমার ছিল না।’
বিভিন্ন মহল থেকে লাগাতার চাপের মুখে বিজেপি নুপুর শর্মাকে বরখাস্ত করায় ক্ষুব্ধ বেশ কয়েকটি হিন্দু সংগঠন। তার মধ্যে অন্যতম হিন্দু সংগঠন হিন্দু সংহতি তো সরাসরি নুপুর শর্মাকে সমর্থন করেছে। সংগঠনের শীর্ষ নেতা দেবতনু ভট্টাচার্য নুপুর শর্মাকে সমর্থন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।
দেবতনু লিখেছেন, ‘ঘটনাটি যিনি ঘটালেন, তিনি মহাপুরুষ। আর ঘটনাটি যিনি বর্ণনা করলেন, তিনি অপরাধী! নুপুর শর্মা যে ঘটনাটির কথা উল্লেখ করায় বিতর্কের জন্ম, সেই ঘটনার জন্য শান্তির দূতেরা লজ্জিত না গর্বিত সেটা কি আপনারা বুঝতে পেরেছেন? খুবই কনফিউজিং তাই না? এর কারণ আমরা আজও গভীর ভাবে ইস*লামকে বুঝতে পারিনি।
আমরা আর ওরা দুটো আলাদা জাতি। এই দুই জাতির সংস্কৃতি আলাদা, সামাজিক মূল্যবোধ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরস্পর বিপরীত ধর্মী। আমাদের চোখে যা নিন্দনীয়, ওদের চোখে তা অনুসরণ যোগ্যও হতে পারে। এর কারণ আমাদের মূল্যবোধ স্থির করা হয় মানব কল্যাণের নিরিখে, ওদের মূল্যবোধ স্থির হয় মোমিন কল্যাণের নিরিখে, কিতাবে কী লেখা আছে এবং ওদের মহান*বি কী বলে গিয়েছেন অথবা কী করে গিয়েছেন তার ভিত্তিতে।
নুপুর শর্মা সত্য বলেছেন, এই সত্য ওদের শাস্ত্র সম্মতও। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হল নুপুর শর্মা সনাতনী দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সত্য ঘটনার নিন্দা করেছেন। এখন ওদের চোখে যেটা আদর্শ আচরণ, সেটাকে আপনি নিন্দা করবেন এবং যিনি নিজে এই আদর্শ মোমিনদের জন্য সেট করে গেছেন, তার এই পবিত্র কাজের উপহাস করবেন, তাতে শান্তির পূজারীদের ভাবাবেগে আঘাত তো লাগবেই!! মোমিনদের দৃষ্টিতে নুপুর শর্মা এই অপরাধই করেছেন।
কিন্তু নুপুর শর্মার বক্তব্য ভারতীয় সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটা দলের চোখে অপরাধ বলে বিবেচিত হওয়া অতিশয় আশ্চর্যজনক নয় কি? নুপুর শর্মাকে শাস্তি দিয়ে বিজেপি যে উদাহরণ সৃষ্টি করল, তাকে জাস্টিফাই করা দলের নেতা কর্মীদের পক্ষে খুবই কঠিন হবে। শুধু আজকে নয় সুদূর ভবিষ্যতেও এর রেশ চলতে থাকবে।’
পালটা, নুপুর শর্মা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হজরত মহম্মদ সম্পর্কে মন্তব্যের পর তাঁদের খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগে দিল্লিতে এফআইআরও দায়ের হয়েছে। সেই এফআইআরের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ নুপুর শর্মা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে।
সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস