মার্কিন কংগ্রেসের প্রশ্নবাণে জর্জরিত টিকটক সিইও

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৪, ২০২৩, ০২:৫৫ পিএম

মার্কিন কংগ্রেসের প্রশ্নবাণে জর্জরিত টিকটক সিইও

প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের মার্কিন কংগ্রেসের মুখোমুখি হওয়া এবারই প্রথম নয়। প্রতিবারই প্রত্যেককে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তবে টিকটক নির্বাহীর এই মুখোমুখি হওয়াটা যেন অন্যগুলোর থেকে একটু ভিন্নই ছিল। শুনানিতে একের পর এক আক্রমণাত্মক সব প্রশ্নের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়েছে টিকটকের প্রধান নির্বাহী শো জি চিউকে। 

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) মার্কিন কংগ্রেসের মুখোমুখি হন তিনি। সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলে এই প্রশ্নবাণ পর্ব।

ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান নির্বিশেষে টিকটক নিয়ে প্রশ্নবাণ ছুড়েছেন কংগ্রেস সদস্যরা। এর চেয়ে দ্রুততম সময়ে কারো কারো ম্যারাথন দৌড়ও শেষ হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন এক কংগ্রেসম্যান। মি. চিউকে যেভাবে বারবার তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে হয়েছে, তাতে সেটা তাঁর ভালোভাবেই অনুধাবন করার কথা।

রাজনীতিবিদরা আসলে লোক দেখানোর জন্য এমনটি করেছে বলে মন্তব্য করেন অ্যাপটির এক মুখপাত্র। তিনি আরও বলেন, শুনানিতে সাড়ে ৪ ঘণ্টার একঘেয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে আমরা অবশ্য দু’একটি নতুন জিনিসও জানতে পেরেছি।

শুরু থেকেই টিকটকের বিরুদ্ধে দু’দল এক হয়ে সমালোচনা করতে থাকে, একইসাথে যে রকম সন্দেহ আর অবিশ্বাস দেখা যায় সব পক্ষ থেকে সেটা ছিল খুবই মারাত্মক।

“কংগ্রেস ইতিহাসের সবচেয়ে দ্বিদলীয় কমিটিতে স্বাগত,” বলেন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বাডি কার্টার।

“মি. চিউ, আপনাকে ধন্যবাদ, রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাটদের এক কাতারে নিয়ে আসার জন্য,” বলেন আরেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ড্যান ক্রেনশ।

এটা দেখাটা সত্যিই বিশেষ কিছু ছিল যে সমস্ত রাজনীতিবিদরা যারা প্রায় কোনকিছুতেই এক হন না, সেই তারাই টিকটক যে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এ ব্যাপারে একেবারে নির্বিশেষে একমত।

শুনানির এক পর্যায়ে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট দলের নারী সদস্য ন্যানেট ব্যারাগান চিউকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তাঁর সন্তান টিকটক ব্যবহার করে কি-না।

চিউ উত্তরে জানান, তার সন্তানরা টিকটক ব্যবহার করে না কারণ তারা সিঙ্গাপুরে থাকে। আর ওই দেশে ১৩ বছরের নিচে শিশুদের উপযোগী টিকটক ভার্সন নেই।

এরপর তিনি পরিষ্কার করেন যে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অ্যাপের এই ভার্সনটি আছে এবং তাঁর সন্তানেরা যদি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতো তাহলে তিনি সেটা তাদের ব্যবহার করতে দিতেন।

শুনানিতে মি. চিউ বারবার ‘প্রজেক্ট টেক্সাস’-এর কথা উল্লেখ করেন। যার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত তথ্য যুক্তরাষ্ট্রেই জমা রাখা হয়। আর এই প্রজেক্টের দেখাশোনার দায়িত্বে অ্যামেরিকান কোম্পানি ওরাকল।

কিন্তু এই প্রজেক্ট টেক্সাস এখনো পুরোপুরিভাবে কাজ করছে না। তাই এখন পর্যন্ত চীনের বাইটড্যান্স প্রকৌশলীদের কাছে তথ্যে প্রবেশাধিকার আছে বলে নিশ্চিত করেন মি. চিউ।

“আমরা বৈশ্বিক আন্তঃকার্যক্ষমতার উপর নির্ভরশীল, চীনের প্রকৌশলীদের তাই তথ্যে প্রবেশাধিকার রযেছে।”—বলেন তিনি।

এই স্বীকারোক্তির বিষয়টা নিয়েই বারবার প্রশ্ন তুলতে থাকতে রাজনীতিবিদরা। তাদের যুক্তি হল যদি চীনের প্রকৌশলীরা তথ্য পেয়ে থাকে তাহলে সেখান থেকে চীনের সরকারের তথ্য না পাবার কারণ নেই।

শুনানিতে টিকটকের নির্মাতা চাইনিজ প্রযুক্তি কোম্পানি বাইটড্যান্সে চিউয়ের মালিকানা আছে কি না জানতে চাইলে নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনে যে জায়গাটায় সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা প্রকাশ পায়, সেটা সম্ভবত বাইটড্যান্সের সাথে টিকটকের দূরত্ব প্রমাণে।

যে কোনো ভাবেই বলা হোক না কেন চাইনিজ কোম্পানিটিই টিকটকের মালিক। মি. চিউ নিজেও একসময় বাইটড্যান্সের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ছিলেন।

যখন শুরুতে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন মি. চিউ বলতে চাননি যে তিনি বাইটড্যান্সের মালিকানার অংশীদার ছিলেন কি-না। কিন্তু আইনপ্রণেতাদের চাপে একসময় তিনি বলেন যে হ্যাঁ তিনি ছিলেন। কিন্তু একইসাথে এই যোগাযোগকে তিনি ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। 

মি. চিউ সাধারণত কংগ্রসের দিকে কোন পাল্টা আক্রমণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। কিন্তু কিছু দুর্লভ মূহুর্তে তিনি সেটা ভালোভাবেই করতে সফল হন।

ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে টিকটক কী করে এমন প্রশ্নের মুখে একপর্যায়ে তিনি বলেন, “সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি অ্যামেরিকান কোম্পানিগুলোরও কিন্তু ডেটা সংরক্ষণের খুব ভালো রেকর্ড নেই....শুধুমাত্র ফেসবুক আর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার দিকেই দেখুন।”

ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য একটি ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক কোম্পানি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ও আরেকটি থার্ড পার্টি অ্যাপ নিয়ে নেয়ার বিষয়টি ২০১৮ সালে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল। শুনানি শেষে টিকটক অভিযোগ করে যে তাদের অ্যাপ তথ্য সুরক্ষায় কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে ব্যাপারে খুবই কম নজর দেওয়া হয়েছে।

“একইসাথে আজ কমিটির সদস্যরা কেউই কিন্তু বলেননি টিকটকে যে ৫০ লাখ ব্যবসা আছে তাদের কী হবে অথবা যে ১৫ কোটি অ্যামেরিকান যারা টিকটক পছন্দ করে সেরকম একটা প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী (মতপ্রকাশের স্বাধীনতা) কিভাবে প্রয়োগ করা হবে।”

টিকটক ওয়াশিংটনে লবিংয়ের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তাদের আরও প্রচুর ডলার এ ব্যাপারে খরচ করতে হবে।

অন্যদিকে মার্কিন সেনেটাররা এখন এমন একটি বিল এনেছেন, যেটি পাস হলে মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে টিকটকসহ যেকোন বিদেশি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ, এমনকি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা চলে যাবে।

Link copied!