৬০ ঘণ্টা পর শেষ হলো ভারতে বিবিসির কার্যালয়ের তল্লাশি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩, ১১:৩৮ এএম

৬০ ঘণ্টা পর শেষ হলো ভারতে বিবিসির কার্যালয়ের তল্লাশি

টানা ৬০ ঘণ্টা অভিযানের পর ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে ভারতীয় আয়কর বিভাগের ‘তল্লাশি’ সমাপ্ত হয়। 

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এই তল্লাশি শেষ হয় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এই তল্লাশির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করতে পারে ভারতের আয়কর বিভাগ। এই বিষয়ে আয়কর বিভাগ বিগত তিনদিনে কোনো বিবৃতি প্রকাশ করেনি।  

ভারতের ইনকাম ট্যাক্স বিভাগের কর্মকর্তারা বিবিসির কার্যালয়ে চালানো টানা তিন দিনের এই তল্লাশিতে ডিজিটাল রেকর্ড, বিভিন্ন নথিপত্র ইত্যাদি ঘেঁটে দেখেন। 

তল্লাশিকালে দিল্লির কস্তুরবা গান্ধী মার্গে অবস্থিত বিবিসি কার্যালয়ে বিবিসির সিনিয়র এডিটরসহ অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তল্লাশি শেষ হলে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান। 

তল্লাশির সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আয়কর বিভাগের কর্মকর্তার তল্লাশির সময় বিবিসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ফোন ক্লোন করেছেন, তাদের ডেস্কটপ ও ল্যাপটপের স্ক্যান করেছেন। বিশেষ করে স্ক্যান করার সময় আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা ‘ট্যাক্স’, ‘ব্ল্যাক মানি’, ‘বেনামি’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেছেন। 

এদিকে, তল্লাশি শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবিসি প্রেস টিম একটি টুইট করেছে। টুইটে বলা হয়েছে, ‘আয়কর কর্তৃপক্ষ দিল্লি ও মুম্বাইয়ে আমাদের কার্যালয়ে তল্লাশি শেষে চলে গেছে। আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব এবং আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব বিষয়গুলো সমাধান করা হবে।’

টুইটে আরও বলা হয়, ‘আমরা কর্মীদের পাশে আছি। যারা দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন বা যাদের কার্যালয়ে রাত কাটানোর প্রয়োজন হয়েছে তাদের কল্যাণ আমাদের অগ্রাধিকার। আমাদের কাজকর্ম আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং আমরা ভারতে এবং ভারতের বাইরে আমাদের পাঠক-শ্রোতাদের সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এদিকে বিবিসির ভারতের স্থানীয় দফতরের এ ধরনের তল্লাশি অভিযানকে স্বাধীন মিডিয়ার ওপর হস্তক্ষেপ বলে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশটির সম্পাদকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এডিটসর গিল্ড। স্থানীয় গণমাধ্যমের দাবি, প্রতিষ্ঠানবিরোধী খবর করায় যেভাবে আয়কর সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা অত্যন্ত হতাশাজনক। শুধু বিবিসি অফিসেই নয়, এর আগেও প্রতিষ্ঠানবিরোধী খবর করায় ২০২১ সালে নিউজ ক্লিক, নিউজলন্ড্রি, দৈনিক ভাস্কর এবং ভারত সমাচার অফিসে হানা দেয়া হয়েছে। তারা সবাই প্রতিষ্ঠানবিরোধী খবর করেছিল। এ ছাড়া নিন্দা জানিয়েছে ভারতের প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়া এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

২০০২ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কী ভূমিকা রেখেছিলেন, সেটার ওপর ভিত্তি করে বিবিসি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে। ওই তথ্যচিত্রটি যদিও ভারতের মোদি প্রশাসন নিষিদ্ধ করে। এমনকি ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার থেকে ওই তথ্যচিত্র নামানোর জন্য আইনি নোটিশও পাঠানো হয়। যদিও বিবিসি ওই তথ্য চিত্র নামায়নি, এমনকি বহু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এখন সেই তথ্যচিত্র ভাইরাল।

বিজেপির পক্ষ থেকে যদিও দাবি করা হয়েছে, বিবিসি আন্তর্জাতিকভাবে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা। তবে এর পাল্টা দাবি করেছে বিজেপিবিরোধী শিবির। কংগ্রেস, বামপন্থি ও তৃণমূল বলছে, বিজেপি সরকারের নগ্ন চেহারা এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ বলেও দাবি করছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Link copied!