গাজায় ফের বিমান হামলা শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিসেম্বর ১, ২০২৩, ০২:২৯ পিএম

গাজায় ফের বিমান হামলা শুরু

ছবি: সংগৃহীত

দেড় মাসেরও বেশি সময় যুদ্ধের পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতি স্বীকার করে শুক্রবার         ( ২৪ নভেম্বর ) থেকে চার দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ( আইডিএফ ) এবং হামাস।

যুদ্ধবিরতির নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই গাজায় আবারও বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইসরায়েলের অভিযোগ, হামাসের পক্ষ থেকেই প্রথম ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। বিষয়টিকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গে নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করে গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার ( ১ ডিসেম্বর ) স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তাঁর ঘণ্টা খানিক আগেই হামাস ইসরায়েলি ভূখণ্ডকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায়। আইডিএফ আরও জানিয়েছে, হামাস যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগে রকেট হামলা চালিয়ে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে।

আইডিএফ এমন অভিযোগ তুললেও হামাস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগের বিপরীতে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের একাধিক সংবাদমাধ্যম। 

রয়টার্স জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির সময় শেষ হওয়ার আগেই ইসরায়েলের বিমান ও গোলন্দাজ বাহিনী গাজাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হামলা শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীও নতুন করে হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও স্থিরচিত্র থেকে দেখা গেছে, গাজার অন্যতম শরণার্থীশিবির জাবালিয়া থেকেও কালো ধোঁয়ার বিশাল স্তম্ভ উঠছে। 

ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মিসর সীমান্তের কাছাকাছি রাফাহ অঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। 

আল-অ্যারাবিয়ার একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন, গাজা স্ট্রিপের দক্ষিণে খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালের কাছাকাছি এলাকা এবং গাজা শহরের একটি বাড়িও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম একটি সূত্রের বরাত দিয়ে আল-অ্যারাবিয়াকে জানিয়েছে, খান ইউনুসের আবাসান শহরেও বোমা হামলা হয়েছে। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত এলাকাগুলোতে আশ্রয় চেয়েছে, যেগুলো দক্ষিণে অবস্থিত।

যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজাবাসীদের গাজার উত্তর অংশে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে বাধা দেয় বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ইসরায়েল বলেছিল, তারা গাজা থেকে ছোড়া একটি রকেট ধ্বংস করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সময়সীমার কয়েক মিনিট আগে গাজার নিকটবর্তী ইসরায়েলি এলাকায় রকেটের সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। তবে হামাসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য আসেনি এ বিষয়ে।

গত ২৪ নভেম্বর প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এরপর দুই দফায় যুদ্ধবিরতির সময় বাড়ানো হয়। কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করে। এই সময়ের মধ্যে সাত দফায় জিম্মি ও বন্দী বিনিময় করে ইসরায়েল ও হামাস। 

 শুক্রবার ( ১ ডিসেম্বর ) সকালে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়াতে আগ্রহী। কিন্তু সেই বিষয়টি পরিপূর্ণ রূপ পাওয়ার আগেই আবারও যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

এদিকে, যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাত দফায় জিম্মি ও বন্দী বিনিময় হয়েছে। হামাস ইসরায়েল থেকে জিম্মি করে নিয়ে ২ শতাধিক ব্যক্তির মধ্যে ১০৫ জনকে মুক্ত করে দিয়েছে।

বিপরীতে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী থাকা ২৪০ ফিলিস্তিনিকেও মুক্ত করেছে তেল আবিব। সর্বশেষ হামাসের কাছে থাকা ৮ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিপরীতে ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয় তেল আবিব।

নতুন করে যুদ্ধ শুরু হলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানিয়েছেন,বেসামরিক প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। তিনি ইসরায়েল সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গাজা সংকট শুরুর পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইসরায়েল সফর করলেন ব্লিংকেন।

ব্লিংকেন বলেছেন, তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন—দক্ষিণ গাজায় এমন কোনো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি করা যাবে না যাতে করে বেসামরিক মানুষের প্রাণ ও সম্পদহানি হয় এবং বাস্তুচ্যুত হতে হয়ে উত্তরে পালিয়ে যেতে হয়। 

ব্লিংকেন আরও বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের চলমান পরিকল্পনা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছি ও আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে জোর দিয়ে বলেছি-বেসামরিক জীবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও উত্তর গাজায় যে পরিমাণ বাস্তুচ্যুতি আমরা দেখেছি তা যে দক্ষিণে পুনরাবৃত্তি করা না হয়।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতাল, পানি পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ক্ষতি এড়াতে ও পরিষ্কারভাবে নিরাপদ অঞ্চল নির্ধারণ করার জন্য দৃঢ় ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। ইসরায়েল এই বিষয়েও একমত হয়েছে।’

Link copied!