হতাশা রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র বিদ্রোহে ঠেলে দিতে পারে: ক্রাইসিস গ্রুপ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৮, ২০২৫, ০৫:৫৯ পিএম

হতাশা রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র বিদ্রোহে ঠেলে দিতে পারে: ক্রাইসিস গ্রুপ

ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে হটিয়ে রাখাইন রাজ্যের উত্তরের বড় একটি অংশ দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি (এএ)। সেখানে আরাকান আর্মির উত্থানে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই করতে তারা বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির থেকে সদস্য সংগ্রহের গতি বাড়িয়েছে।

রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু। আর আরাকান আর্মির প্রধান সমর্থক রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী।

রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এর সুযোগ নিচ্ছে এবং ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দলে টেনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করছে বলে ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

যদিও আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং রোহিঙ্গাদের এই বিদ্রোহ মিয়ানমারে আন্তসাম্প্রদায়িক সম্পর্কের ভয়াবহ ক্ষতি করবে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ করে তুলবে।

আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের তৈরি করা ‘বাংলাদেশ/ মিয়ানমার: রোহিঙ্গা বিদ্রোহের ঝুঁকি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদের কী করা উচিত, সে বিষয়েও কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রাখাইনে নিজেদের রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি বলে দাবি করে। বাংলাদেশে শরণার্থীশিবিরগুলোতে তারা কয়েক বছর ধরে রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিল।

তবে রাখাইনে আরাকান আর্মির উত্থানের পর শরণার্থীশিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পারস্পরিক দখলদারির সংঘাত দ্রুত কম গেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তারা একটি সমঝোতায় পৌঁছায়একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এখন তাদের লক্ষ্য আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করা, এ জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দলে সদস্য বাড়াচ্ছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের সরকার আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সীমান্ত রয়েছে, তার পুরোটাই এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। 

রাখাইনে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান হামলা আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের এই আলোচনাগুলোকে দুর্বল করে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, বরং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব আরও প্রবল হতে পারেযা প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শরণার্থীশিবিরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে আনা এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপ জোরদার করা উচিত বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আর আরাকান আর্মির উচিত এমন সব স্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া, যার মাধ্যমে প্রমাণিত হবেসব সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যোগ্যতা তাদের আছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে যখন আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখলের পথে অগ্রসর হতে শুরু করে, তখন সংখ্যায় পিছিয়ে থাকা মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংঘবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা।

সেনাবাহিনী জোর করে রোহিঙ্গা পুরুষদের মিলিশিয়া ইউনিটে নিয়োগ করে, স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহের জন্য সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে কাজ করে এবং রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায়যা ছিল সেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির এক বিস্ময়কর বাঁকবদল। কারণ এই গোষ্ঠীগুলোই আগে রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই চেষ্টা আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রার গতি কিছুটা ধীর করেছিল, তবে তাদের আটকাতে পারেনি। অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের প্রতি আরাকান আর্মির মৌখিক হুমকি ও নিপীড়নের অভিযোগের কারণে অনেক শরণার্থী সেনাবাহিনীর চেয়েও আরাকান আর্মিকে নিজেদের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখে থাকেন।

এসব কারণে মংডু শহরতলির পতনের আগেই রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পুনর্গঠন করতে শুরু করেছিল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মংডু শহরতলি দখল করে আরাকান আর্মি, যা উত্তর রাখাইন পুরোপুরি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার ইঙ্গিত ছিল।

মংডু পতনের এক মাস আগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো একটি সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছায়। পরের মাসে শরণার্থীশিবিরে একটি বড় ঐক্য সমাবেশের আয়োজন করা হয়। যেখানে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এই প্রচারাভিযানকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ধর্মীয় নেতাদের নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে। তারা সাধারণ রোহিঙ্গাদের সামনে তাদের লড়াইকে ‘অবিশ্বাসীদের’ বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ হিসেবে উপস্থাপন করে।

নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও সহিংসতার কারণে এত দিন অধিকাংশ শরণার্থী রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন। তা সত্ত্বেও আরাকান আর্মির প্রতি প্রবল নেতিবাচক মনোভাব এবং রাখাইনে নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনিশ্চিত থেকে যাওয়ার আশঙ্কায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জন্য শরণার্থীশিবিরগুলো নতুন সদস্য সংগ্রহের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশি নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাদের এই ‘ঐক্য’ অভিযানে সমর্থন দিয়েছে বলে ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশি নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী ও আরাকান আর্মিদুই পক্ষের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জোর দিয়ে বলেছে, তাদের উদ্দেশ্য শরণার্থীশিবিরে সহিংসতা কমানো। তবে বাস্তবে তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, তারা রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যাতে আরাকান আর্মিকে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা যায়। ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তারা এই গোষ্ঠীগুলোকে বাস্তব সহায়তা দিচ্ছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এসব নিরাপত্তা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা বাংলাদেশের সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে প্রাথমিক সংলাপের সম্ভাবনাকে বিপন্ন করে তুলছে। আরাকান আর্মি বর্তমানে সেই সব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে, যেখান থেকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা পালিয়ে এসেছিল।

রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইতিমধ্যে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির ওপর হামলা চালানো শুরু করেছে এবং সীমান্তসংলগ্ন শিবিরগুলোতে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

বিদ্রোহ আরও তীব্র হলে তা সাধারণ রোহিঙ্গা, আরাকান আর্মি, বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য গভীর ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এতে রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ ও রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে সংঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে আরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার শঙ্কাও বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশের জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। সশস্ত্র এই গোষ্ঠী বিশ্বাস করে, ঢাকা রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য যেকোনো অর্থবহ উদ্যোগে এখন অপরিহার্য অংশীদার হয়ে উঠেছে আরাকান আর্মি। তাই তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কের অবনতি শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আরাকান আর্মির ওপর রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ রোহিঙ্গাদের যে চোখে দেখে, সেটাকে আরও প্রভাবিত করতে পারে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা পাওয়ার আন্দোলন।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় দেশজুড়ে আরাকান আর্মির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এ সময়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অর্থ মিয়ানমারের অনেক সাধারণ নাগরিকের চোখে রোহিঙ্গাদের ‘ভুল’ পক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া। এতে জনগণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাড়বে নিপীড়নের ঝুঁকি এবং এটা দেশটির বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন সংস্কারের দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।

তাই তিন পক্ষআরাকান আর্মি, রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তোলা ভবিষ্যৎ সংঘাত এড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে বলা হয়, তাদের উচিত, আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপ জোরদার করা এবং সীমান্ত এলাকার জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে সেখানকার স্থিতিশীলতা বাড়াতে রাখাইন রাজ্যে অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য ও মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করা এবং একই সঙ্গে শরণার্থীশিবিরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে এনে বেসামরিক নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা।

প্রতিবেদনে আরাকান আর্মির উদ্দেশে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মির উচিত, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করা যে তারা রাখাইন রাজ্যে সব সম্প্রদায়ের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংলাপে বসে পারস্পরিক মতভেদ মেটানোর জন্যও তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক ত্রাণ তহবিলের একটি বড় অংশ তিনি বাতিল করেছেন। এর বেশ প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে। সেখানে মানবিক ত্রাণসহায়তার অর্ধেকের বেশি আসত যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তার বিদেশি সহায়তার বড় অংশ বাতিল করার পর অন্য আন্তর্জাতিক দাতাদের উচিত, বাংলাদেশের শরণার্থীশিবিরগুলোর ওপর এর প্রভাব যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া।

কারণ আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে গেলে, বিশেষ করে খাদ্যসহায়তা হ্রাস পেলে শরণার্থীরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। সহায়তাসংকট শরণার্থীদের মধ্যে যে হতাশা ও ক্ষোভ জন্ম দিচ্ছে, তা রোহিঙ্গা বিদ্রোহের পক্ষে আরও সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।

সেখানে তরুণ পুরুষ রোহিঙ্গাদের জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠী ও অপরাধ চক্রে যোগ দেওয়া এখন টিকে থাকার একটি কৌশল হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি নারী ও কিশোরীদের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে বিয়ের ঘটনা বাড়ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। হতাশা থেকে লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনের ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের সমাধান সশস্ত্র বিদ্রোহ নয়। শরণার্থীশিবিরে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতি বাড়তে থাকা সমর্থন মূলত অধিকাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভেতরের চরম হতাশার প্রতিফলন। তারা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। তারা যেসব এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছে, সেগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলেকোনো দিন আর সেখানে ফিরে যেতে পারবে কি না, তা তাদের জানা নেই। তার ওপর সহায়তা কমে যাওয়ায় শরণার্থীদের মধ্যে হতাশা এখন উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে।

তবে এখনো সব আশা শেষ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশ, আরাকান আর্মি এবং এর বাইরে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষের সামনে এখনো কিছুটা আশার আলো ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে, তাদের সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। কারণ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিদ্রোহ রোহিঙ্গা জনগণের স্বার্থে রক্ষার চেয়ে বরং ক্ষতিই বেশি ডেকে আনতে পারে।

Link copied!