ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে জরুরি নাম্বার: প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবের হিড়িক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

জুন ১৭, ২০২৫, ০২:২৪ পিএম

ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে জরুরি নাম্বার: প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবের হিড়িক

ইরানে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নাম্বারে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।

ইরানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের তুরস্ক হয়ে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইরানে দূতাবাসের কর্মকর্তারা জরুরী ভিত্তিতে তাদের নাম্বার প্রদান করেছে। কিন্তু সেই নাম্বারে অধিকাংশ কল ও ম্যাসেজ করে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। যুদ্ধাবস্থায় এমন ঘটনা নিয়ে বেশ ব্রিবত বোধ করছে কূটনৈতিকরা।

ইতোমধ্যে ইরান বাংলাদেশি দূতাবাস তুরস্ক সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে সেই সাথে তেহরান থেকে দূরে একটি সেইফ হাউসে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তুরস্ক যেতে ভিসা প্রয়োজন। ফলে দ্রুতই তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ আসতে পারছে না বৈধ বাংলাদেশীরা। এছাড়া ইরানের সাথে সীমান্ত থাকলেও পাকিস্তান থেকে এই মুহুর্তে আসা সম্ভব নয়।

তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কন্স্যুলার অফিসার ওয়ালিদ ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলেন, দূতাবাস থেকে আমার সহকর্মী ফারুক ও তাহের সাহেবের নম্বর শেয়ার করেছিলো ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদেরকে সহায়তা করতে। দু:খের বিষয় হচ্ছে, ফারুক যে কলগুলো রিসিভ করছে তার ভেতর প্রেম প্রস্তাব, বিয়ের প্রস্তাব, কিভাবে যুদ্ধে যাবে এগুলো নিয়েই ফারুককে ৭৫ শতাংশ কল রিসিভ করতে হচ্ছে। দেশবাসীর হাতে-পায়ে ধরিরে, এই মুহূর্তে আমাদের সাথে এই মস্করাগুলো করবেন না, প্লিজ। আমাদেরকে বাচতে দিন, ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদেরকে বাচাতে দিন। আজ আমাদের দূতাবাস এরিয়াতে হামলা হবে। আমরা ওখানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদেরকে ৩০ মিনিটের ভেতর সদিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছি৷

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বৈধভাবে যেসব বাংলাদেশি ইরানে বসবাস করছেন তাদের তুরস্ক দিয়ে দেশে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা করছেন ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং তুরস্কে অবস্থানরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। কিন্তু, সীমান্ত দূরবর্তী হওয়ায় কয়েকদিন সবাইকে তেহরানের কাছাকাছি একটা সেইফ হাউজে রাখার ব্যবস্থা করা হবে যতদিন সবার ভিসা নিশ্চিত না করা হয়।

ইরানে রয়েছে যত বাংলাদেশী

বাংলাদেশের দূতাবাসের তালিকায় ইরানে ৬৭২ জন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। তবে তালিকার বাইরে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। প্রায় ১৪ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই অনিয়মিত।

ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আট জন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশির গত ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে তেহরানে শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন ।

ইরানের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সেদেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন সেকটরে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। প্রায় ২০০ এর মতো শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এছাড়া মানবপাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সব সময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিবারগুলো সরানো যায়নি

যেকোনও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে দূতাবাসে কর্মরতদের পরিবারগুলোকে প্রথমে অন্য জায়গায় নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে ইসরায়েলি হামলার কোনও আগাম সতর্কতা না থাকায় পরিবারগুলো সরানো হয়নি।

সরকারের একটি সূত্র জানায়, তেহরানে প্রায় শতাধিক দূতাবাস এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যার মানুষ কর্মরত আছেন। তাদের প্রায় কেউই পরিবার সরিয়ে নেওয়ার মতো সময় পায়নি।

নিরাপদ স্থান

তেহরানে ক্ষেপনাস্ত্র হামলার কারণে কোনও গ্রামে বা অন্যকোনও নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কূটনীতিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্বাগতিক দেশের। কিন্তু আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপনাস্ত্র থেকে নিরাপত্তা দেওয়াটা দুষ্কর।’

দূতাবাসের লোকদেরকে নিজেদের উদ্যোগে সরে যেতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইরানের পক্ষেও বেশি কিছু করা সম্ভব কিনা, সেটি বলা দুষ্কর।’

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে পাকিস্তান, আর্মেনিয়া ও তুরস্কের সীমান্ত রয়েছে। আকাশপথ বন্ধ থাকায় একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থলপথ দিয়ে সরে যাওয়া। এরমধ্যে সবচেয়ে দূরে ও দুর্গম স্থলপথ হচ্ছে পাকিস্তান। আর্মেনিয়া ও তুরস্ক যেতে হলে ভিসা লাগবে এবং সেটি এখন যোগাড় করা মুশকিল।’

 

Link copied!