যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে সম্মত হামাস-ইসরায়েল: ট্রাম্প

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৯, ২০২৫, ১১:৫২ এএম

যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে সম্মত হামাস-ইসরায়েল: ট্রাম্প

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, হামাস ও ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়-সংক্রান্ত তার পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে।

গতকাল বুধবার ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, ইসরায়েল ও হামাস— উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে সই করেছে।’

তিনি যোগ করেন, ‘শিগগির সব জিম্মি মুক্তি পাবে, আর ইসরায়েল নির্ধারিত সীমারেখায় সেনা প্রত্যাহার করবে।’

মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক্স হ্যান্ডলে জানান, বুধবার রাতে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের সব শর্ত ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

এই চুক্তি যুদ্ধের অবসান, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ খুলে দেবে। বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

এর কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প বলেন, আলোচনা ‘খুব ভালোভাবে’ চলছে এবং তিনি হয়তো এই সপ্তাহের শেষের দিকে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যেতে পারেন।

বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, হয়তো আমি সপ্তাহের শেষের দিকে, সম্ভবত রোববারের দিকে সেখানে যেতে পারি।

কাতার, তুরস্ক, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বুধবার লোহিত সাগরের উপকূলে অবস্থিত মিসরের শর্ম আল-শেখ রিসোর্টে তৃতীয় দিনের মতো আলোচনায় বসেন।

মধ্যস্থতাকারীরা দুই পক্ষকে ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাব নিয়ে মতবিরোধ সমাধানে আলোচনা করেন। প্রস্তাবের প্রথম ধাপে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে ২০ জন বেঁচে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তিও এতে অন্তর্ভুক্ত। 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তি সইয়ের দিনটিকে ‘ইসরায়েলের জন্য একটি মহান দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বৃহস্পতিবার বৈঠক ডেকেছেন তা অনুমোদনের জন্য।

হামাস চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ট্রাম্প ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি তাদের আহ্বান, ইসরায়েল যেন পুরোপুরিভাবে চুক্তির প্রতিটি শর্ত মেনে চলে।

ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহকারী কৌশলগত পরিকল্পনাবিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার বুধবার আলোচনায় অংশ নেন বলে জানায় ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি সূত্র।

এ ছাড়া শেষ দফার আলোচনায় অংশ নেন দীর্ঘদিনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান বিন জসিম আল-থানি।

হামাস প্রতিনিধিদলে ছিলেন খলিল আল-হাইয়া ও জাহের জাবারিন। এই দুই নেতা গত মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের হামলায় বেঁচে যান। তখন নিহত হয়েছিলেন অন্তত পাঁচজন।

আলোচনা চলাকালীনও বুধবার গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত আটজন নিহত এবং ৬১ জন আহত হয়েছেন।

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস বুধবার জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান থাকা সত্ত্বেও গত পাঁচ দিনে ইসরায়েল ২৭১টি বিমান ও আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলা জনবহুল এলাকা এবং বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। এতে ১২৬ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এরপর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সেই থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।

Link copied!