জুন ১৪, ২০২৫, ০২:১১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার ইসরায়েলের ইরানে চালানো হামলায় লক্ষ্যবস্তু ছিল পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, সামরিক ঘাঁটি ও কিছু বেসামরিক অবকাঠামো। ইরান নিশ্চিত করেছে যে, এই হামলায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভলিউশনারি গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
হামলার জবাবে ওই রাতেই ইরান থেকে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতে এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহত ও প্রায় ৬৩ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানে অভিযান অব্যাহত রাখবে। অন্যদিকে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে “কঠোর শাস্তি” পেতে হবে।
ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা কারা মারা গেছেন
ইসরায়েল এই অভিযানকে আখ্যায়িত করেছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ হিসেবে। ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডসের ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী মারা গেছেন। সামরিক বাহিনী ও বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিক, এমনকি শিশুরাও হতাহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
চলুন, ইরানের নিহত হওয়া এসব হাই-প্রোফাইল কমান্ডারদের সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
মোহাম্মদ বাঘেরি
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে থাকা মোহাম্মদ বাঘেরি ছিলেন সেনাবাহিনী ও রেভলিউশনারি গার্ডস—দুই বাহিনীরই প্রধান। তিনি ১৯৮০ সালে আইআরজিসিতে যোগ দেন এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় গোয়েন্দা বিভাগ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
অন্য কমান্ডারদের চেয়ে তাকে অপেক্ষাকৃত কম কট্টরপন্থী মনে করা হতো। গত এপ্রিলে এক ভাষণে যুদ্ধ এড়িয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলায় ইরানে কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। এখন তার জায়গায় সশস্ত্র বাহিনীর নতুন প্রধান নিযুক্ত করা হয়েছে আব্দোলরাহিম মৌসাভিকে।
হোসেইন সালামি
ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডস, আইআরজিসির কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন হোসেইন সালামি। বাঘেরির মত হোসেইন সালামিও ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় আইআরজিসিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরে ২০০৯ সালে ডেপুটি কমান্ডার এবং ২০১৯ সালে প্রধান হন।
তিনি মূলত একজন সুবক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্যও তার খ্যাতি ছিল। গতমাসে এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করলে তাদের জন্য ‘নরকের দরজা খুলে যাবে।’
তার স্থানে নতুন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মোহাম্মাদ পাকপোর।
গোলামালি রাশিদ
তিনি খাতাম-আল আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্সের প্রধান ছিলেন গোলামালি রাশিদ। এই ইউনিট আইআরজিসি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের সমন্বয় করে।
ইরান-ইরাক যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন এবং পরে সেনাবাহিনীর উপপ্রধানও ছিলেন। মৃত্যুর পর তার স্থানে নিয়োগ পেয়েছেন আলি সাদমানি।
আমির আলি হাজিযাদেহ
আইআরজিসির এরোস্পেস ফোর্স বা বিমান ও মহাকাশ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রধান ছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির একজন শীর্ষ কর্মকর্তাও ছিলেন তিনি।
একটি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটিতে অবস্থানকালে তাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ২০২০ সালে ইউক্রেনীয় বিমান ভূপাতিতের দায় স্বীকার করেছিলেন তিনি, যেখানে ১৭৬ জন নিহত হন। এই ঘটনার পর থেকে তিনি দেশটির জনগণের সমালোচনার মুখে পড়েন।
ফেরেইদুন আব্বাসি
পরমাণু বিজ্ঞানী ফেরেইদুন আব্বাসি ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত।
এরপর ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্বরত ছিলেন তিনি। ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী ছিলেন আব্বাসি।
এ বছরের মে মাসে ইরানের টিভি চ্যানেল এসএনএনের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলেছিলেন।
নিহত অন্যান্য পরমাণু বিজ্ঞানীদের পরিচয়
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে আরো কয়েকজন সুপরিচিত পরমাণু বিজ্ঞানীও মারা গেছেন ইসরায়েলের হামলায়। হামলায় নিহত বিজ্ঞানীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন:
মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি: তেহরানের আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছিলেন।
আবদুল্লাহামিদ মিনৌচেহর: ইরানের শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।
আহমেদ রেজা জোলফাঘারি এবং আমিরহোসেইন ফেকহি: শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক।