ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে কী যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ছে, ৩০টি মার্কিন ট্যাংকার জেট ইউরোপে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৮, ২০২৫, ১২:১০ পিএম

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে কী যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ছে, ৩০টি মার্কিন ট্যাংকার জেট ইউরোপে

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে তুমুল উত্তেজনা এবং ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র গত তিন-চারদিনে আমেরিকার বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে অন্তত ৩০টি সামরিক জেট ইউরোপে সরিয়ে এনেছে।

এগুলোর গতিপথের ওপর নজর রাখা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনার পর বিবিসি ভেরিফাই এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।

এ ৩০টি জেটই মার্কিন সামরিক বাহিনীর ট্যাংকার উড়োজাহাজ, এগুলো আকাশেই যুদ্ধবিমান ও বোমারু বিমানে পুনরায় জ্বালানি ভরে দিতে পারে।

ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোরের তথ্য অনুযায়ী, এই ট্যাংকারগুলোর মধ্যে অন্তত ৭টি কেসি-১৩৫ স্পেন, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে অবস্থিত বিভিন্ন মার্কিন বিমানঘাঁটিতে থেমেছে।

শুক্রবার ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কমান্ডার ও শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীদের ওপর ইসরায়েলের আচমকা হামলার পর তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যে টানা ৬ দিন ধরে আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।

ইসরায়েল বলছে, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি ভণ্ডুল করার উদ্দেশ্যেই তারা শুক্রবারের হামলা চালিয়েছিল। ইরানের ওপর হামলায় তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও শিগগিরই যুক্ত হবে বলে অনেকেই অনুমান করছে।

তার মধ্যেই ওয়াশিংটন এতগুলো ট্যাংকার মধ্যপ্রাচ্যের কাছাকাছি নিয়ে এল। তাদের এ পদক্ষেপ আদৌ মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ট্যাংকার বিমানগুলোর স্থানান্তর যে ‘একেবারেই স্বাভাবিক নয়’ তা বলছেন এক বিশেষজ্ঞ।

থিংকট্যাঙ্ক রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলছেন, আসছে সপ্তাহগুলোতে ওই অঞ্চলে ‘তীব্র সামরিক অভিযানে সহায়তার লক্ষ্যে’ পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিমানগুলো মোতায়েন করা হয়েছে বলে ‘জোরাল আভাস’ পাওয়া যাচ্ছে।

বিবিসি ভেরিফাই যে ৭টি ট্যাংকার জেটের গতিপথ পর্যালোচনা করেছে, সেগুলো ইউরোপের ঘাঁটিতে নামার পরও বিভিন্ন দিকে গেছে। মঙ্গলবার বিকালে সিসিলির পূর্ব দিকে এগুলোকে উড়তে দেখা গেছে বলে তাদের ফ্লাইট ট্র্যাকিং তথ্য বলছে। এ ট্যাংকারগুলোর ৬টির কোনো সুনির্দিষ্ট গন্তব্য ছিল না, একটি পরে নামে গ্রিসের ক্রেট দ্বীপে।

আইরিশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক প্রধান, ভাইস অ্যাডমিরাল মার্ক মেলেট বলছেন, এসব ট্যাংকারগুলো ইরানকে ভয় দেখাতেও মোতায়েন করা হতে পারে, যেন তারা তাদের পরমাণু কর্মসূচিতে ছাড় দেয়।

এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগর থেকে তার বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিট্‌জকে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে আসছে বলে খবর বেরিয়েছে। এই সপ্তাহের শেষদিকে রণতরীটির ভিয়েতনামের দানাংয়ে থাকার কথা ছিল।

কিন্তু ‘হঠাৎ উদ্ভূত জরুরি কাজের প্রয়োজনে’ এটি ভিয়েতনাম না গিয়ে অন্য গন্তব্যে রওনা হয়েছে বলে হ্যানয়ের মার্কিন দূতাবাসের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জাহাজের গতিপথে নজর রাখা ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার ভোরের আগে রণতরীটি মালাক্কা প্রণালীতে ছিল, গতিমুখ সিঙ্গাপুরের দিকে।

অনেকগুলো যুদ্ধবিমান বহন করতে সক্ষম ইউএসএস নিমিট্‌জের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধজাহাজও থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েকদিনে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে বেশকিছু এফ-১৬, এফ-২২ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও নিয়ে গেছে বলে মঙ্গলবার তিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন। গত কয়েকদিনে যেসব ট্যাংকার বিমান ইউরোপে স্থানান্তর করা হয়েছে সেগুলোর সাহায্যে এ যুদ্ধবিমানে সহজেই পুনরাই জ্বালানি ভরা যাবে।

অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাবে। ইসরায়েল এরই মধ্যে ওই স্থাপনাগুলোতে হামলা চালালেও তেল আবিবের কাছে যে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র আছে তা দিয়ে ইরানের ভূগর্ভস্থ স্থাপনার ক্ষতি করা যাবে না।

বিশেষ করে কোম শহরের কাছে একটি পাহাড়ি কমপ্লেক্সে মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত ফরদোর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প নিয়েই ওয়াশিংটন আর তেল আবিবের যত মাথাব্যাথা।

ওই স্থাপনা গুড়িয়ে দিতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রকে জিবিইউ-৫৭এ/বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) গোলা ব্যবহার করতে হবে, ১৩ হাজার ৬০০ কেজি ওজনের এ বোমাগুলো ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ নামেই বেশি পরিচিত।

এই বোমাই মাটির নিচে ২০০ ফুট পর্যন্ত কংক্রিটের গভীরতা ভেদ করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। কেবল বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমানই এই বোমা বহন করতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে মার্কিন ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি বি-২ বোমারু বিমান দেখাও গিয়েছিল।

ইরানের দক্ষিণ উপকূল থেকে এই দ্বীপটির দূরত্ব দুই হাজার ৪০০ মাইলের মতো। এই দূরত্বে সহজে অভিযান চালানোর সক্ষমতা বি-২ বোমারু বিমানের আছে বলে মনে করেন ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর সাবেক ডেপুটি অপারেশন চিফ এয়ার মার্শাল গ্রেগ ব্যাগওয়েল।

উপগ্রহের ছবিতে মার্চের শেষদিকে এই বোমারু বিমানগুলোকে দিয়েগো গার্সিয়ায় দেখা গেলেও সাম্প্রতিক ছবিতে সেখানে সেগুলোকে পাওয়া যায়নি, বলছে বিবিসি।

মেলেট একে ‘জিগস’ পাজলের অনুপস্থিত খণ্ড বলছেন, কারণ ইরানে যে কোনো মার্কিন অভিযানের আগে কাছাকাছি এ বিমানগুলোর উপস্থিতি অনুমিত বলেই মনে করেন তিনি।

ব্যাগওয়েলও একমত। যদিও তিনি জানান, বি-২ বিমানগুলো একটানা ২৪ ঘণ্টাও চলতে পারে। সেক্ষেত্রে হোয়াইট হাউজ সিদ্ধান্ত নিলে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকেও অভিযান শুরু করতে পারে।

“ইরানের আত্মরক্ষার সব উপায় ইতিমধ্যেই অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে, ফলে দেশটির সামরিক ও এমনকি পরমাণু স্থাপনাগুলোও কার্যত ইসরায়েলের দয়ার অধীনে চলে গেছে,” বলছেন ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর সাবেক এ ডেপুটি অপারেশন চিফ।

Link copied!