ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি, কী আছে চুক্তিতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ১২:০১ পিএম

ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি, কী আছে চুক্তিতে

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ আলোচনার পর ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

গতকাল মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঘোষিত ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি বুধবার ভোর থেকে কার্যকর হয়েছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতি হলেও বেসামরিক মানুষজন এখনই যেন বাড়িঘরে ফিরে না যায়, এই বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে এই চুক্তিপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০০৬ সালে এই প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই ইসরায়েল এবং হিজবুল্লার ৩৬ দিনের লড়াই বন্ধ হয়েছিল।

কী আছে চুক্তিতে

চুক্তিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধ বিরতির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী আগামী ৬০ দিনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে লেবানন থেকে সরে যাবে।

অন্যদিকে হিজবুল্লার যোদ্ধাদেরও লিটানি নদীর উত্তরে সরে যেতে হবে। অর্থাৎ, ইসরায়েলের সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে তাদের চলে যেতে হবে। 

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে লেবাননের সেনা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যাবে এবং খেয়াল রাখবে যাতে হিজবুল্লা সেখানে নতুন করে তাদের সামরিক কাঠামো তৈরি করতে না পারে।

দক্ষিণ লেবাননে দেশের সেনা ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করবে। এই অঞ্চলটি হিজবুল্লার শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লা বউ হাবিব একথা জানিয়েছেন।

একটি ত্রিপাক্ষিক মঞ্চ তৈরি করা হবে। যেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী, ইসরায়েলের সেনা এবং লেবাননের সেনা থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স এই মঞ্চে মধ্যস্থতা করবে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই মঞ্চ গঠিত হবে।

একই সঙ্গে জো বাইডেন জানিয়েছেন, দুই দেশের লড়াই চলাকালীন যারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন তারা নিজেদের সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীতে ফিরে যেতে পারবেন। 

যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের সম্ভাব্য সব অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। 

ইসরায়েল কেন এই চুক্তি করতে চায়  

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথমত, ইরানের হুমকির প্রতি মনোযোগ দেয়া। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও নেতানিয়াহু উল্লেখ করেছেন যে ইসরায়েল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রধান অংশ এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধ্বংস করেছে। হিজবুল্লাহকে সবসময় ইরানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান ঢাল হিসাবে দেখা হতো। হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের একটি বড় অংশ ধ্বংস হওয়ার ফলে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক ভারসাম্য ইসরায়েলের পক্ষে চলে গেছে।

দ্বিতীয়ত, নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি বিরতি নেয়া এবং পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করাটা প্রয়োজন। ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী দুই দিকে দুইটি দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল না।

তবে এখন লেবাননে যদি সংঘাত শেষ হয়, তাহলে গাজায় আরও বেশি ইসরায়েলি বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে যুদ্ধের কোনও সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না।

তৃতীয়ত, হামাসকে বিচ্ছিন্ন করা। হিজবুল্লাহকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেয়ার অর্থ হল হামাসের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া।

হামাস বরাবরই মনে করেছে যে ইরানের ‘এক্সিস অব রেজিসট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধের অক্ষ’-এর বাকি সদস্যরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়বে।

যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন যে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করার জন্যই তারা এই যুদ্ধ করছেন। যদিও তার এই দাবিটি বিতর্কিত।

গাজায় এখনও আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবার ও স্বজনরা নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, তিনি গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন এবং বন্দিদের মুক্তি নিয়ে চুক্তি করার ক্ষেত্রে অবহেলা করছেন।

আক্রমণ অব্যাহত

একদিকে যখন যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা সম্মত হচ্ছে, তখন অন্যদিকে লেবাননে লাগাতার আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সেনারা।

বুধবার ভোর চারটায় যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত আক্রমণ চলতে থাকে। 

যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্ততা করেছে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা চুক্তিতে সম্মত হওয়ায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ স্বাগত জানিয়েছেন। তার আশা, এই চুক্তি গাজাতেও সংঘর্ষ-বিরতির রাস্তা খুলে দেবে। গাজার লড়াই বন্ধের জন্যও মধ্যস্থতা করছে ফ্রান্স।

Link copied!