প্রায় তিন দশক ধরে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার বিরোধের মূলে রয়েছে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল। স্ব-ঘোষিত প্রজাতন্ত্র নাগর্নো-কারাবাখের আর অস্তিত্ব থাকছে না বলে জানিয়েছেন প্রজাতন্ত্রের নেতা সামভেল শাহরামানিয়ান। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে।
সামভেল জানিয়েছেন, ১ জানুয়ারি থেকে নাগর্নো-কারাবাখ প্রজাতন্ত্রের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়ার আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
জনগণের শারীরিক সুরক্ষা এবং তাদের স্বার্থ নিশ্চিতের লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
নাগর্নো-কারাবাখ আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। অঞ্চলটি তিন দশক ধরে আর্মেনিয়দের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত সপ্তাহে আজারবাইজান অঞ্চলটি দখল করে নেয়।
নাগর্নো-কারাবাখে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করত আজারবাইজান।
অঞ্চলটির বাসিন্দারা যে আর্মেনিয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চায়, তা প্রমাণিত হয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় নাগর্নো-কারাবাখের আঞ্চলিক পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে।
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনগুলোকে বরাবরই দমিয়ে রাখতে চেয়েছে আজারবাইজান। অন্যদিকে এই আন্দোলনকে সমর্থন জুগিয়েছে আর্মেনিয়া। ফলে হয়েছে অনেক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি আর্মেনিয়ানের বসবাস। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার ৫০০ জনের মত অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
সামভেল আজারবাইজানের চুক্তির উল্লেখ করে আরও বলেন, এ অঞ্চলের "অধিবাসীরা বিনামূল্যে, নিজ ইচ্ছায় এবং বাধাহীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবে।"
২০২২ সালের ডিসেম্বরে নাগর্নো-কারাবাখের লাচিন করিডর অবরুদ্ধ করে আজারবাইজান।
লাচিন করিডরটিই নাগর্নো-কারাবাখের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বাসিন্দার সঙ্গে আর্মেনিয়াকে যুক্ত করার একমাত্র পথ।
লাচিন করিডর অবরুদ্ধ করার ফলে অঞ্চলটিতে খাদ্য ও ওষুধের অভাব দেখা দেয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আজারবাইজানের দাবি, করিডরটি ব্যবহার করে অস্ত্র সরবরাহ করা হতো আর্মেনিয়ানদের কাছে। অন্য একটি পথ দিয়ে খাদ্য ও সাহায্য পৌঁছানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও নাগর্নো-কারাবাখের আর্মেনিয়ানরা তা প্রত্যাখ্যান করে বলে দাবি করেছে বাকু।
১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া যুদ্ধের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আজারবাইজানের বাহিনী অনেক দূর এগিয়ে যায়। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় তখন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় উভয় পক্ষ। একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয় সে যুদ্ধ। বলা হয়, কারাবাখের সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র ও ভেঙে দেওয়া হবে এবং আলোচনা হবে এই ছিটমহলকে আজারবাইজানের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে।
সেপ্টেম্বরে ২৪ ঘণ্টার একটি সামরিক অভিযান চালায় আজারবাইজান। একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয় সে যুদ্ধ।
কিন্তু এই অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জাতিগত আর্মেনিয়দের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কা করেন, নাগর্নো-কারাবাখে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এ ঘটনার পর আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ন বলেন, এই অঞ্চলে `জাতিগত নিধন` চলছে।
উল্লেখ্য, দুই দেশ কখনোই শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি এবং বছরের পর বছর ধরে আলোচনা সত্ত্বেও উভয় দেশের মধ্যে নেই কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক।