জুন ২, ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে এক কর্মসূচিতে বিক্ষোভকারীদের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন।
বিবিসি লিখেছে, কলোরাডোর বোল্ডারে স্থানীয় সময় রোববার দুপুরের এ ঘটনাকে ‘সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা’ বিবেচনা করে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই।
এ হামলার ঘটনায় মোহাম্মদ সাবরি সোলাইমান নামের ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিতে আটক করা হয়েছে। ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিতে দিতে তিনি বিক্ষোভকারীদের দিকে পেট্রোল বোমা ছোড়েন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য।
রয়টার্স লিখেছে, আহতদের বয়স ৬৭ থেকে ৮৮ বছরের মধ্যে, তাদের সবাইকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ডেনভারে এফবিআইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মার্ক মিখালেক।
তিনি বলেন, “প্রাথমিক তথ্য পর্যালোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এটি একটি পরিকল্পিত সহিংসতা। আমরা এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে তদন্ত করছি।”
মোহাম্মদ সাবরি সোলাইমান একাই ওই হামলা চালান বলে স্থানীয় পুলিশের ভাষ্য। হামলার পর তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বোল্ডার পুলিশের প্রধান স্টিফেন রেডফার্ন বলেন, “আমরা প্রায় নিশ্চিত, একমাত্র হামলাকারীকেই আমরা আটক করেছি।”
এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেলও একে ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কলোরাডোর অ্যাটর্নি জেনারেল ফিল ওয়েইসার বলেছেন, “হামলায় নিশানা করা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে। তাই এটাকে বিদ্বেষমূলক হামলা বলেই মনে হচ্ছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় শহর বোল্ডারের প্রাণকেন্দ্রে জনপ্রিয় পিয়ার্ল স্ট্রিট মলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে ‘রান ফর দেয়ার লাইভস’ নামের একটি সংগঠন হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলিদের স্মরণে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল।
সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর থেকে আমরা প্রতি সপ্তাহেই এ পদযাত্রার আয়োজন করে আসছি। কিন্তু এবারই প্রথম কোনো সহিংস ঘটনার শিকার হলাম।”
রয়টার্স লিখেছে, চলমান গাজা যুদ্ধকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে যে বিভক্তি আর উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, এই ঘটনা তারই নমুনা বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারীদের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দেখছেন। ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের আটক করা হচ্ছে এবং এমন আন্দোলন চালাতে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্থ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হামলার পর এক এক্স পোস্টে ট্রাম্পের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার দাবি করেন, হামলাকারী সোলাইমান যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সেখানে অবস্থান করছিলেন এবং আগের সরকারের বদান্যতায় কাজ করতেও পারছিলেন।
তিনি বলেন, “এ ধরনের আত্মঘাতী অভিবাসন নীতির সম্পূর্ণ উল্টো পথে আমাদের যাওয়া উচিত।”
গুরুতর দগ্ধ আহতরা
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ব্রুক কফম্যান বলেন, “আমি অন্তত চারজন নারীকে মাটিতে পড়ে থাকতে বা বসে থাকতে দেখেছি। তাদের কারও কারও পায়ে গুরুতর পোড়া ক্ষত ছিল। একজনের পুরো শরীরে পোড়ার দাগ ছিল, পতাকা দিয়ে তার শরীর জড়িয়ে রাখা হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “একজন ব্যক্তি—সম্ভবত তিনিই হামলাকারী— তার গায়ে শার্ট ছিল না। তার হাতে ছিল স্বচ্ছ তরলে ভর্তি কাচের বোতল। তিনি চিৎকার করছিলেন।
“চারপাশে সবাই তখন চিৎকার করে বলছিল, ‘পানি আনো, পানি আনো।’”
ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা ও ইহুদি ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেন, “এটা স্পষ্টত একটি ইহুদি-বিরোধী সন্ত্রাসী হামলা। ভয়াবহ ঘটনা। আমাদের অবশ্যই এই ঘৃণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
এ হামলার এক মাস আগে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে এক ব্যক্তি। সে ঘটনা দেশটিতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ ঘিরে উত্তেজনার পারদ আরও বাড়িয়ে দেয়।