সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে আফগানিস্তানের ৮৫ ভাগ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে দেশটির কট্টরপন্থী তালেবান গোষ্ঠী। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাশিয়ার মস্কোতে তালেবানদের একটি প্রতিনিধি দলের নেতা শাহাবুদ্দিন দেলওয়ার এ দাবি জানান।
তিনি আরও জানান, আফগানিস্তানের ৩৯৮টি জেলার মধ্যে ২৫০টি জেলা তারা দখলে নিয়েছে। তাদের দখল করা এলাকার মধ্যে আফগান-ইরান সীমান্তে গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্রসিং রয়েছে বলেও তিনি জানান।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও জানিয়েছেন, আফগানিস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তের দুই–তৃতীয়াংশ এলাকাও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবান।
টানা দুই দশকের সামরিক অভিযান শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগান মিশন সমাপ্ত করার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তালেবান যোদ্ধারা সীমান্ত শহর ইসলাম কালা দখলে নেয়ার দাবি জানায়। এরপর থেকেই তাদের বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, ‘ইরান সীমান্তবর্তী ইসলাম কালা শহর পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে।’ তবে এলাকা পুনরুদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে সরকারি বাহিনী। এএফপিকে আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারেক আরিয়ান জানান, সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ আফগানিস্তানের সব বাহিনী ওই এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। এলাকাটি পুনর্দখলে সরকারি বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
গত এক সপ্তাহের মধ্যে আফগান সেনাদের হটিয়ে তালেবানরা অর্ধেক ডজনের বেশি প্রদেশ দখলে নিয়েছে। শুক্রবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত তারা মোট ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে ১৮টি প্রদেশের রাজধানী দখলে নিয়ে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দিচ্ছে।
এদিকে, দেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি তাঁরা সামাল দিতে পারবেন। রাজধানী কাবুলে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা খুবই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন, আমাদের বিজয় হবেই।’
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) আসে তালেবানদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম হেরাত নগরীর দখল করার পাশাপাশি সেখানে নেতৃত্ব দেওয়া মিলিশিয়া বাহিনীর প্রবীণ কমান্ডার ইসমাইল খানকে (৭০) বন্দি করে। শুক্রবার (১৩ আগস্ট) স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা এ খবর জানিয়েছেন।
হেরাতের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য গুলাম হাবীব হাসিবি গণমাধ্যমকে জানান, ‘তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তি অনুযায়ী হেরাতের বর্তমান গভর্নর ও কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ ইসমাইল খানকে তালেবান যোদ্ধাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ইসমাইল খান আফগানিস্তানে ‘হেরাতের সিংহ’ নামেই পরিচিত।
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে তিনি বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। নামকরা মুজাহিদীন কমান্ডার হিসেবে তিনি সমাদৃত। সম্প্রতি আফগান সরকারের অধীনে স্থানীয় মিলিশিয়াদের নিয়ে তিনি তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।