মে ১৪, ২০২২, ০৭:০২ পিএম
মেয়াদ শেষ করার আগেই আচমকা পদত্যাগ করলেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। মুখ্যমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেওয়ার পরেই তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। পদত্যাগ করে কি শেষ পর্যন্ত বিজেপির সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলাবেন এই রাজনীতিক? এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
আরও পড়তে পারেন: বিপ্লবের পদত্যাগে দুঃখে কাতর তাঁর বাংলাদেশি কাকা!
শনিবার ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েই বিপ্লব দেব বললেন, “সংগঠনের কাজ করব।”
শনিবার সবাইকে চমকে দিয়ে রাজ্যভবনে গিয়ে ত্রিপুরার রাজ্যপাল সত্যদেব নারায়ণ আর্যর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। ইস্তফা দেওয়ার পরে বিপ্লব গণমাধ্যেমে বলেন, “ দল চাইছে ২০২৩-এর নির্বাচনের আগে সংগঠনের শক্তি বাড়াতে। দীর্ঘ সময় সরকারে থাকার জন্য সংগঠনের শক্তি বাড়ানোর দরকার। সংগঠন থাকলে তবেই সরকার থাকবে। তাই দল আমাকে সংগঠনের কাজে লাগাতে চাইছে।”
বিপ্লব দেব আরও বলেন, “এত দিন প্রধানমন্ত্রীর দর্শনে আমি কাজ করে এসেছি। আমি ত্রিপুরায় ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছি। এ বার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ইচ্ছাতেই সংগঠনের কাজ করব।”
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিপ্লবকে দিল্লি ডেকে পাঠান বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেখানে গিয়ে প্রথমে বিজেপি সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা (জিপি নাড্ডা) ও পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। বিজেপি সূত্র জানায়, এই দুই বৈঠকেই বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে দলের কাজ করার নির্দেশ দে্ন শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই ভোটের ১০ মাস আগেই পদত্যাগ করলেন বিপ্লব।
জিম প্রশিক্ষক থেকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী-- বিপ্লবের রাজনৈতিক উত্থান অনেকটাই উল্কার গতিতে। ২০১৮ সালে তাঁর নেতৃত্বেই ত্রিপুরায় আড়াই দশকের বাম শাসনের অবসান ঘটায় বিজেপি।
সাংগঠনিক কৃতিত্ব হিসেবে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে সেই সময় বিপ্লবকেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন মোদী-শাহরা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কার্যকালে সন্তুষ্ট ছিলেন না বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁর সঙ্গে সঙ্ঘাতের জেরেই দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন সুদীপ রায় বর্মণসহ বেশ কয়েকজন বিধায়ক। তাই বিপ্লবের ইস্তফা আচমকা ঘটে যাওয়া কোনও রাজনৈতিক ঘটনা নয়।
এর আগে গুজরাট ও উত্তরাখণ্ডেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে বিজেপি এবং মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওই পদত্যাগীদের। এ বার সেই পথের পথিক হতে পারেন বিপ্লব। তাঁর বক্তব্য থেকেই তেমন ইঙ্গিত মিলেছে বলে দাবি জাতীয় রাজনৈতিক মহলের। কারণ, বিপ্লবের পদত্যাগের সময় ত্রিপুরায় হাজির ছিলেন বিজেপি সাংগঠনিক নেতা ভূপেন্দ্র যাদব।
বিপ্লব কুমার দেব ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর ত্রিপুরার গোমতী জেলার উদয়পুরের রাজধর নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে বিপ্লবের কাকা বিপ্লব দেবের কাকা প্রাণধন দেব জানান, ভাইপোর নাম বিপ্লব রাখার পিছনে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জড়িত। বাংলাদেশের চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বাসিন্দা হিরুধন দেব ও মিনা রানি দেবের সন্তান বিপ্লব দেবের জন্ম হয় কচুয়াতেই।
বিপ্লবের পিতা-মাতা তার জন্মের পূর্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের চাঁদপুর জেলা থেকে শরণার্থী হিসেবে ভারতে চলে আসেন। তবে পিতার পরিবারের অনেক সদস্য এখনও বাংলাদেশে রয়ে গেছেন। ১৯৬৭ সালের ২৭ জুন থেকে বিপ্লবের বাবা ভারতের নাগরিক।
ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ত্রিপুরার মু়খ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মানিক সরকার ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেমন কূটনৈতিক সৌহার্দ্য ছিল তেমনই ছিল বিপ্লব দেবের সঙ্গে। মু়খ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার ঠিক আগে বিপ্লব দেব সর্বপ্রথম শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর টানা বিতর্ক ও দলীয় গোষ্ঠীকোন্দলে জর্জরিত হয় ত্রিপুরার বিজেপি ও আইপিএফটি জোট সরকার।