বেলারুশ সীমান্তে রাশিয়ার সাথে আলোচনায় রাজি ইউক্রেন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২, ০৫:৫৭ এএম

বেলারুশ সীমান্তে রাশিয়ার সাথে আলোচনায় রাজি ইউক্রেন

রবিবারই বেলারুশ সীমান্তের চেরনোবিল সংলগ্ন প্রিপয়াত নদীর ধারে রাশিয়ার সাথে আলোচনায় বসার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ কি শেষমেশ পরমাণু যুদ্ধের দিকে গড়াতে চলল? মস্কোর আকাশে তেমনই আশঙ্কার কালো মেঘ। কারণ রবিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধী দলকে (ডেটারেন্স ফোর্সেস) ‘হাই অ্যালার্ট’-এ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তার অভিযোগ, ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমী দেশগুলো রাশিয়ার সাথে চরম শত্রুতামূলক আচরণ করছে।

এদিকে এই খবর যখন আশঙ্কার ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিচ্ছে, ঠিক তখনই জানা গেল, বেলারুশ সীমান্তে রাশিয়ার সাথে বৈঠকে বসার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে ইউক্রেন। স্বভাবতই পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনার মধ্যে এই খবরে আপাত স্বস্তি আসছে বিশ্বে। বৈঠকটি বাংলাদেশ সময় রবিবার দিবাগত রাতে হতে পারে।

এরইমধ্যে পশ্টিমারাও বসে নেই। রাশিয়ার সেনাদের প্রতিরোধে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। এবার সেই দলে যোগ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)। ইউরোপের ২৭ দেশের এই জোট গঠনের পর এই প্রথম কোনো দেশে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিল তারা।

আরও পড়তে পারেন

কিয়েভে তুমুল লড়াই, গ্যাসের পাইপলাইন উড়িয়ে দিল রাশিয়া

রবিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ‘‘আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানকে রুশ সেনার পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধী বাহিনীকে ‘হাই অ্যালার্ট’-এ রাখার নির্দেশ দিয়েছি।’’ কিন্তু কেন? তার জবাবও দিয়েছেন পুতিন। তাঁর দাবি, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিম দুনিয়া একের পর এক শত্রুতামূলক পদক্ষেপ করে চলেছে। তারই পাল্টা ‘ডেটারেন্স ফোর্সেস’-কে তৈরি থাকার নির্দেশ।

প্রায় একই সময় ঘটেছে আরও একটি উল্লেখজনক ঘটনা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্‌স্কির সাথে টেলিফোনে কথা হয়েছে বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর। দু’জনের মধ্যে ফোনালাপের পর জানা গেছে, ইউক্রেন রাশিয়ার সাথে আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি। সূত্রের খবর, বেলারুশ সীমান্তে চেরনোবিল সংলগ্ন প্রিপয়াত নদীর ধারে কোনও এক জায়গায় বিবদমান দুই দেশ আলোচনায় বসবে বলে আপাতত স্থির হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন

যুদ্ধে ৪৩০০ রুশ সেনা নিহত—দাবি ইউক্রেনের

ইউক্রেনে রবিবারও চলছে রুশ সেনার সাথে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী লড়াই। ইউক্রেনের বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে রাশিয়াকে। যা তাদের কাছেও খানিকটা অপ্রত্যাশিত। কিভের রাস্তায়ও লড়াই চলছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের পুরো দখল এখনও নিজেদের হাতেই রাখতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেন সেনারা। রবিবার দুপুর পর্যন্ত রাস্তায় লড়াইয়ের পর সাময়িক পিছু হঠেছে রুশ সেনারা। স্থানীয় গভর্নর বলেছেন, ‘‘খারকিভ সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।’’

এই পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের পরমাণু প্রতিরোধী দলকে তৈরি থাকার নির্দেশ দিলেন কেন, এই প্রশ্ন উঠছে। তা হলে কি অপ্রত্যাশিতভাবে ইউক্রেনে বাধার মুখে পড়েই পরমাণু-ভাবনার উদয় হল পুতিনের মনে? অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, সম্প্রতি ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন ‘সুইফট’ নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়ার ব্যাঙ্কগুলোকে বাদ দেওয়া শুরু করেছে। ‘সুইফট’ থেকে বাদ যাওয়ার অর্থ হল, রাশিয়ার ব্যাঙ্কের পক্ষে বিদেশি লেনদেন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। পাশাপাশি রয়েছে পশ্চিমী দুনিয়ার দেশগুলোর চাপানো ধারাবাহিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। তা হলে যুদ্ধের খরচ উঠবে কী করে? পশ্চিমের দেশগুলোর এমন একতরফা নিষেধাজ্ঞায় ক্রমশ চাপ বাড়ছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের উপর, ‘ডেটারেন্স ফোর্সেস’-কে ‘হাই অ্যালার্টে’ পাঠানোর নির্দেশ সে দিকেই ইঙ্গিত করে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একটি অংশ।

Link copied!