জাতিগত সহিংসতায় অগ্নিগর্ভ মণিপুরে নিহত বেড়ে ৬৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মে ৯, ২০২৩, ০৬:১৭ পিএম

জাতিগত সহিংসতায় অগ্নিগর্ভ মণিপুরে নিহত বেড়ে ৬৫

ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে মেইতেই সম্প্রদায়কে ‘তফসিলি উপজাতি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। এ স্বীকৃতির কারণে, পাহাড়ি জমি লাভ, চিকিৎসা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবেন মেইতেই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। এ নিয়ে স্থানীয় কুকি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। গত বুধবার থেকে কুকিদের সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের সংঘাত শুরু হয়। এ সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে।

ইম্ফলে এক সংবাদ সম্মেলনে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জানান, এ ছাড়াও ২০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। সহিংসতায় গত কয়েকদিনে ধর্মীয় স্থানসহ ১ হাজার ৭০০ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘মণিপুরের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবাদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে মণিপুর সরকার।’

মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেন, ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও অন্তত ১০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। 

তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এখনো আতঙ্কে আছেন এবং তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের বাসিন্দা এল স্যাংলুন সিমতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমরা এখনো নিরাপদ বোধ করছি না। 

এদিকে গত রোববার সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ৯৬ ঘণ্টার অক্লান্ত চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। এখন সবকিছু শান্ত রয়েছে।

তবে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় এখনো উত্তেজনা রয়েছে। যেকোনো সময় নতুন করে সংঘাত শুরু হতে পারে। 

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সংঘাতকারীরা সেনা সদস্যদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪১টি বেশি বন্দুক ছিনিয়ে নিয়েছে। সেখান থেকে ২১৪টি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি অস্ত্রগুলো থানায় জমা না দিলে অভিযান চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করা হবে।

মণিপুর ভারতের প্রত্যন্ত উত্তর-পূর্বের একটি অঞ্চল। এই অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে জাতিগত ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ লেগে আছে। 

রাজ্যটিতে মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের বেশিরভাগই ইম্ফল উপত্যকায় বাস করেন। অন্যদিকে মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ নাগা ও কুকি এবং তারা পার্বত্য জেলাগুলোতে বাস করেন।

মেইতেই সম্প্রদায় বহু বছর ধরেই ‘তফসিলি উপজাতি’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এ দাবির বিরোধিতা করে আসছিল নাগা ও কুকি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তাদের অভিযোগ, মেইতেইদের দাবি মেনে নেওয়া হলে তারা পার্বত্য জেলাগুলোতে তাদের পূর্বপুরুষের বনভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাবে। 

মেইতেই সম্প্রদায় তাদের দাবির প্রতিবাদে গত ৩ মে ১০টি পার্বত্য জেলায় 'উপজাতি সংহতি পদযাত্রা' অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভারতের এই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মণিপুরে হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। কয়েকটি জেলায় কারফিউ জারি করার পাশাপাশি ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে সহিংসতাকারীদের ‘দেখা মাত্র গুলি’ করার আদেশ জারি করা হয়েছিল। 

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং রাজ্য সরকারকে এক সপ্তাহ পরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে। 

উত্তর-পূর্বে কয়েক ডজন উপজাতি গোষ্ঠী ও ছোট গেরিলা বাহিনী রয়েছে। এদের দাবি বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত। 

১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে মণিপুরে প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সংঘাতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তবে অনেক গোষ্ঠী দিল্লির সঙ্গে ক্ষমতার জন্য নানা চুক্তিতে আসার গত কয়েক বছরে এসব বিরোধ কমেছে।

 

Link copied!