জুলাই ৭, ২০২২, ১২:৫৩ এএম
টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে জ্বালানী তেল— এমন কিছু নেই যে দাম বাড়ছে না। মুদ্রাস্ফীতির এই লাগাম টানতে বিশ্বের একেক দেশ একেক ব্যবস্থা নিচ্ছে। জিম্বাবুয়ের দশা আগে থেকেই খারাপ ছিল। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি এখন চরম আকার নিয়েছে। ফলে মান কমেছে স্থানীয় মুদ্রার। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার নানা ব্যবস্থাও নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে জুলাই মাসের শেষ নাগাদ বৈধ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণমুদ্রা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গার্ডিয়ান ও ফরচুনের খবরে বলা হয়, গত মাসে জিম্বাবুয়েতে মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০০০ সালের মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টিই স্মরণ করে দিচ্ছে। ওই সময় দেশটির মুদ্রার মান তিনবার পরিবর্তন করা হয়েছিল। যদিও অবশেষে ২০০৯ সালে মুদ্রাটি একেবারে পরিত্যক্ত করা হয়।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জন ম্যাংগুদা বলেন, সোনার মুদ্রা বিনিময় মূল্য হিসেবে কাজ করবে এবং এটি দেশে মার্কিন ডলারের চাহিদা হ্রাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় মুদ্রার মূল্য অনেক কমে গেছে।
বিবৃতিতে ম্যাংগুদা আরও বলেন, স্থানীয় মুদ্রা এবং মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা উভয় দিয়েই এই স্বর্ণমুদ্রা জনগণের কাছে বিক্রি করা যাবে। সে ক্ষেত্রে স্বর্ণমুদ্রার দাম প্রচলিত আন্তর্জাতিক মূল্য এবং উৎপাদন খরচের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হবে।
এই স্বর্ণমুদ্রার নামকরণ করা হবে জলপ্রপাত ‘ভিক্টোরিয়া ফলস’ বা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘মসি-ওয়া-তুনয়ার’ নামানুসারে। এ মুদ্রা স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক নগদ মুদ্রাও ভাঙানো যাবে, যা দিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্য করা যাবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জিম্বাবুয়ের ওই স্বর্ণমুদ্রায় এক ট্রয় আউন্স (৩১ গ্রামের বেশি) সোনা থাকবে। এগুলো বিক্রি করবে দেশটির ফিডেলিটি গোল্ড রিফাইনারি, অরেক্স ও স্থানীয় ব্যাংকগুলো।
স্বর্ণমুদ্রা চালুর ঘোষণায় জিম্বাবুয়ের নাগরিকেরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ী ইভান মুপাচিকা বলেন, ‘আমার নগদ অর্থ রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি কয়েন ধরিয়ে দেবে, যাতে আমি আস্থা রাখতে পারি না।’
জিম্বাবুয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নাগরিকের আস্থা সংকট রয়েছে। কারণ, এর আগে আর্থিক কর্তৃপক্ষ বিশ্বাসযোগ্যতা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
২০০৮ সালে দেশটি ১০০ বিলিয়ন ডলার (জিম্বাবুয়ে) নোট বাজারে আনে। জিম্বাবুয়ের ডলারের ভয়াবহ পতনের ফলে অনেক নাগরিক তাঁদের জমানো অর্থ হারান। কারও কারও পেনশন হারাতে হয়। এতে লোকজন ব্যাংকে অর্থ রাখা বাদ দিয়ে বাড়িতে অর্থ জমাতে শুরু করেন। ২০০৯ সাল থেকে মুদ্রাস্ফীতিতে জর্জরিত ডলার থেকে সরে আসে দেশটি। এর বদলে মার্কিন ডলার নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
২০১৯ সালে আবার স্থানীয় মুদ্রা চালু করা হয়। তবে সেটিও দ্রুত মূল্য হারায়। গত সপ্তাহে দেশটির অর্থমন্ত্রী মুথুলি নুকুবে বলেন, ‘স্বর্ণমুদ্রা আরও বেশি মূল্য ধরে রাখতে পারবে।’