শেষ সংখ্যা ছেপে ফেলল বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন পত্রিকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুলাই ২, ২০২৩, ০৪:১৩ এএম

শেষ সংখ্যা ছেপে ফেলল বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন পত্রিকা

শেষ প্রিন্ট সংস্করণটি ছেপে ফেলল বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো পত্রিকা ওয়েইনার জেইটং (wiener zeitung)। প্রায় ৩২০ বছর ধরে বিদগ্ধ পাঠকদের তথ্যসেবা দিয়ে আসছিল অস্ট্রিয়ার এই পত্রিকাটি। এবার তারা ছাপা সংস্করণটি বন্ধ করে দিল। 
তবে অস্ট্রিয়ার এই পত্রিকাটি তাদের অনলাইন প্রকাশনা চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি একটি মাসিক মুদ্রিত সংস্করণ চালু রাখার পরিকল্পনা করেছে। অবশ্য সেই পরিকল্পনা এখনো বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভিয়েনা-ভিত্তিক দৈনিক সংবাদপত্র এই ওয়েইনার জেইটং। সম্প্রতি আইনের একটি পরিবর্তনের কারণে মুদ্রণ পত্রিকা আর লাভজনক করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণেই তারা ছাপা পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এপ্রিল মাসে অস্ট্রিয়ার জোট সরকার এই আইন পাস করে। এ আইনে কোম্পানিগুলোকে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বিজ্ঞাপন আকারে সংবাদপত্রের মুদ্রিত সংস্করণে প্রকাশ করার আইনি বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হয়েছে। এটিই ছিল পত্রিকাগুলোর আয়ের একটি বড় অংশ। ফলে সরকারি গেজেট হিসেবে পত্রিকাটির ভূমিকা আর থাকছে না।

এই আইন পরিবর্তনের ফলে পত্রিকাটির প্রকাশকের আনুমানিক ১ কোটি ৮০ লাখ ইউরো (১ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি) আয় কমে গেছে। পত্রিকাটি বাধ্য হয়ে সম্পাদকীয় বিভাগের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে ২০–এ নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। ৬৩ জন কর্মীকে ছাঁটাই করেছে তারা।

ওয়েইনার জেইটং পত্রিকাটি অস্ট্রিয়ান সরকারের মালিকানাধীন। কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবেই সম্পাদকীয় নীতিতে তারা স্বাধীন। ১৭০৩ সালের আগস্টে এই পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয়। ১২ জন প্রেসিডেন্ট, ১০ কাইজার এবং দুটি রিপাবলিক দেখেছে এই পত্রিকা। প্রথম সংস্করণে পত্রিকাটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, ‘কথার ফুলঝুড়ি নয়, সংবাদের সরল বিবরণ দিতে চাই।’

১৭৬৮ সালে এই পত্রিকায় ‘বিশেষভাবে প্রতিভাবান’ ১২ বছর বয়সী এক বালকের কনসার্ট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেই বালক আর কেউ নয়— পশ্চিমা ধ্রুপদি সংগীতের কিংবদন্তি উলফগ্যাং অ্যামাডিউস মোজার্ট!

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রিয়া পরাজিত হলে পত্রিকাটি শেষ হ্যাবসবার্গ সম্রাট কাইজার কার্লের পদত্যাগ নিয়ে একটি বিশেষ সংস্করণ ছাপে।

শুক্রবার (৩০ জুন) পত্রিকাটি তাদের দৈনিক মুদ্রিত সংস্করণের শেষ সংখ্যা ছাপে। সম্পাদকীয়তে ছাপা পত্রিকা চালানোর ইতি টানার কারণ হিসেবে সরকারের নতুন আইনকে দায়ী করা হয়। এতে বলা হয়, ‘এটা হলো মানসম্পন্ন সাংবাদিকতার জন্য খুবই ঝড়ো সময়… এখন অনেক অনেক প্ল্যাটফর্ম, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোকে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য চারদিকে ভুয়া খবর, বিড়ালের ভিডিও আর ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সাথে পাল্লা দিতে হচ্ছে।’

গত এপ্রিলে এই পত্রিকার প্রচারসংখ্যা ছিল সাধারণ দিনে মাত্র ২০ হাজার, যদিও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এর চাহিদা ছিল ৪০ হাজারের মতো।

তিন শতকের দীর্ঘ সময়ে সংবাদপত্রটি শুধু একটিবার ছাপা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল। অস্ট্রিয়া হিটলারের জার্মানিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ১৯৩৯ সালে নাৎসিরা কাগজটি বন্ধ করে দেয়। ১৯৪৫ সালে অস্ট্রিয়া যখন মিত্রদের দখলে তখন এটি আবার মুদ্রণ শুরু করে।

ওয়েইনার জেইটং মুদ্রণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে এখন ছাপা সংস্করণে টিকে থাকা বিশ্বের প্রাচীনতম সংবাদপত্রটি হলো ১৭০৫ সাল থেকে প্রকাশিত জার্মান প্রকাশনা হিলডেসহাইমার অ্যালগেমেইনে জাইটুং। 

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Link copied!