বৈশ্বিক মহামীর করোনা সংক্রমণের ফলে এবারের রমজান সম্পূর্ণ ভিন্ন। লকডাউন আর গরমের মাঝেই রাখতে হচ্ছে রমজানের রোজা। তাই এই সময়টায় নিজেকে সুস্থ রাখা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য ইফতারে নানারকম ভাজাপোড়া না খেয়ে পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন, রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার পরে শরীরে যে দুর্বলতা আসে তা উপশমে দই হতে পারে সবচেয়ে ভালো খাবার। ইফতারিতে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে দই খেলে পেটে তৈরি হওয়া এসিডিটি সমস্যা দূর হতে পারে। এছাড়াও দই হতে পারে আমাদের শরীরে পুষ্টি ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট খাবার।
১. পেটের অস্বস্তি দূরীকরণ
দই খেলে পেট ঠাণ্ডা থাকে। সারদিন রোজা থাকায় পেটে এসিডিটি তৈরি হয়। ইফতারে একসঙ্গে অনেকগুলো খাবার খেয়ে ফেলায় অস্বস্তি শুরু হয়। এসময় দই খাওয়া খুবই কার্যকর।
২. হজম প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা
দই একটি পুষ্টিতে ভরপুর খাবার। প্রথম উপাদান হচ্ছে ফাইবার, যা শরীরের ডাইজেশন বা হজম প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে। এছাড়াও দইয়ে থাকে প্রোবাইটিস যা উপকারী ব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত। এই ব্যকটেরিয়া শরীরে ডাইজেশন বা পারিপাক প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
প্রতিদিন দই খেলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। এর মধ্যে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান ইনফেকশনের সঙ্গে লড়াই করে। এই প্রোবায়োটিক উপাদান হজম এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলন ক্যানসার এবং পেটের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে দই।
৪. স্বাস্থ্যকর হাড় গঠনে
এক বাটি দই আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি’র চাহিদা জোগাবে। এই উপাদান দুটি হাড়ের জন্য স্বাস্থ্যকর। দইয়ের মধ্যে উপস্থিত ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত করে; এটি হাড়ের রোগ অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৫. উচ্চ রক্তচাপ কমায়
দইয়ের মধ্যে কেবল ক্যালসিয়ামই নয়, উচ্চ পরিমাণ পটাশিয়ামও রয়েছে। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। রক্তে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় দই। দই খেলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
৬. ত্বকের জন্য ভালো
ত্বক পরিষ্কার ও মসৃণ হতে সাহায্য করে দই। এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। দইকে মুখের প্যাক হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭.পুষ্টিগুণে ভরপুর
দইয়ে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। যেমন- পটাশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি৫, জিংক, আয়োডিন এবং রিবোফ্লাভিন। এ ছাড়া এর মধ্যে আছে ভিটামিন বি১২; যা রক্তে লোহিত কণিকা ভালো রাখে। এটি স্নায়ু পদ্ধতি ভালো রাখতেও কার্যকর।
৮. ওজন কমায়
ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির গবেষকদের করা একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণও কমে যায়। ফলে ওজন হ্রাসের সম্ভাবনা প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে যায়।
৯. মানসিক চাপ কমায়
দই খাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে এমনকিছু পরিবর্তন হয় যে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটি কমতে শুরু করে। তাই নিয়মিত দই খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
১০. নারীদের বিশেষ উপকারিতা
দইয়ে থাকা ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস নামক একটি ব্যাকটেরিয়া শরীরের ক্ষতিকর জীবাণুদের মেরে ফেলে। ফলে ভেজাইনাল ইনফেকশনের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। এ কারণে নারীদের নিয়মিত দই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।