বাথটাব হচ্ছে স্নান করার স্থান। এই টাবে স্নান করার সুবিধা রয়েছে অনেক। তবে সেই সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে অনেক বিপদও। বিপদটি হচ্ছে এই টাবে স্নান করতে যেয়ে জীবন হারাচ্ছে অনেকে।
আমেরিকায় প্রায় প্রতিদিনই একজন মারা যান বাথটাবে ডুবে। সে দেশের হাওয়ার্ডস নিউজ সার্ভিস এক সমীক্ষা চালিয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। দেখা গিয়েছিল ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ এই পাঁচ বছরে আমেরিকায় ১৬৭৬ জন বাথটাবে ডুবে মারা গিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে জানতে পারেন, এরা সকলেই মদ্যপান করে বাথটাবে গোসল করতে নেমেছিলেন। সকলেরই বয়স ছিল ৬৪—র মধ্যে।
এজন্য চিকিৎসকরা মদ্যপান করে বাথটবে নামতে বারণ করছেন । এই বাথটাবে অনেক বিখ্যাত শিল্পীরা মারা গেছেন। চলুন জেনে নেয়া যাক দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাথটাবে মারা গেছেন যেসব তারকারা তাদের নাম এবং কারন।
১. ম্যাথু পেরি: আমেরিকান অভিনেতা ও কৌতুকশিল্পী ম্যাথু পেরির অকালমৃত্যু এখনও মেনে নিতে পারছেন না তাঁর অনুরাগীরা। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। শনিবার (২৮ অক্টোবর) অভিনেতার নিজবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় মৃতদেহ।
জানা গেছে, অভিনেতার লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়ির বাথরুম থেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ম্যাথুকে। তবে অভিনেতার মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি। কিন্তু তদন্তকারীদের দাবি, স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যু হয়েছে ম্যাথুর।
২.শ্রীদেবী: বলিউডের সুপার হিরোইন শ্রীদেবীরও মৃত্যু হয়েছে বাথটাবে ডুবে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। দুবাই পুলিশের তরফে ফরেনসিক রিপোর্টে বলা হয়, বেসামাল হয়ে বাথটাবে পড়ে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে শ্রীদেবীর।
এ ছাড়া শ্রীদেবীর শরীরে অ্যালকোহল পাওয়া গেছে বলেও জানা গেছে।মূলত দুবাইয়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। আর সেখানেই হোটেল রুমে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় অভিনেত্রীকে।
৩.হুইটনি হিউস্টন: আমেরিকান পপ আইকন হুইটনি হিউস্টনকে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলটন হোটেলের বাথটাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
অফিসিয়াল রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাথটাবে ডুবে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি অতিরিক্ত মাত্রায় কোকেন ব্যবহার করেছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে।
৪.ববি ক্রিস্টিনা ব্রাউন: ববি ব্রাউন হচ্ছেন হুইটনি হিউস্টনের ২২ বছর বয়সী মেয়ে । তিনি মায়ের মতো একইভাবে মারা গেছেন। ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি ববি ক্রিস্টিনা ব্রাউনকে বাথটাবে মুখ নিচু করে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রায় ছয় মাস কোমায় থাকার পর ২৬ জুলাই ২০১৫ সালে তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত ঘোষণা করেন।
৫.জিম মরিসন: জেমস ডগলাম মরিসন একজন আমেরিকান সংগীতশিল্পী, গীতিকার, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং কবি। তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন আমেরিকান রক ব্যান্ড দি ডোরস এর প্রধান গায়ক ও গীতিকার হিসেবে।
এ শিল্পীকে ১৯৭১ সালের ৩ জুলাই প্যারিসে তার বাথটাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এসময় তার মুখ, নাক এবং বুকের চারপাশে রক্ত শুকিয়ে গিয়েছিল বলে জানা গেছে।
সরকারি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা তার মৃত্যুর অনেক কারণের মধ্যে একটি হতে পারে। এ ছাড়া ড্রাগ এবং অ্যালকোহল ওভারডোজের কারণটিও উল্লেখ করা হয়।
৬.জুডি গারল্যান্ড: জুডি গারল্যান্ড একজন মার্কিন গায়িকা ও অভিনেত্রী ছিলেন। এ অভিনেত্রী মারা গেছেন মাত্র ৪৭ বছর বয়সে। তাকে ১৯৬৯ সালে বাথটাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
অবশ্য জুডি এর আগে অনেকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন। এটি তার পঞ্চম স্বামী যিনি তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। জুডির মৃত্যুর কারণ বলা হয় অতিরিক্ত মাত্রায় বারবিটুরেটর (চেতনানাশক) গ্রহণ করা।
৭. ক্লদ ফ্রাঁসোয়া: বিখ্যাত ফরাসি পপ গায়ক ক্লদ ফ্রাঁসোয়া একটি পানি ভর্তি বাথটাবে দাঁড়িয়ে একটি ভাঙা লাইট ঠিক করার চেষ্টা করছিলেন। তখনই তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, মদ খেতে খেতে যদি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে কেউ। তাহলে বাথটাব কেন; গামলার অল্প পানিতে ডুবেও মৃত্যু হতে পারে।
মৃগী আক্রান্ত রোগীদেরও হাঁটুজলে ডুবে মৃত্যু হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, পানিতে নামার পর যদি খিঁচুনি শুরু হয়, সেক্ষেত্রে রোগীর পক্ষে উঠে আসা সম্ভব হয় না।
চিকিৎসকরা আরও জানাচ্ছেন, সবসময়ই মনের মধ্যে একটা ভাল ‘ভয়’-এর অনুভুতি থাকে। কোনও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার আগে এই ভয়ের অনুভূতিই আমাদের সাবধান করে দেয়। কিন্তু মদ খেতে শুরু করলে এই ভয়টা কমতে থাকে। সেই সাথে কমে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ। মস্তিষ্কের সাথে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ও কমতে থাকে।
বাথটাব স্নান করার স্থান হলেও এই টাবে স্নান করার সুবিধার পাশাপাশি বিপদ থাকার কারণে, বাথটাবে স্নানের সময় বাড়তি সতর্কতা না নিলেই নয়। হোটেলের ঘর হোক, কিংবা বাড়ি স্নান করার সময় অবশ্যই সতর্কতা মাথায় রাখা দরকার। জেনে নিন বাথটাবে স্নানের সময় কী কী সতর্কতা নিতে হবে।
১) মদ্যপান করে কিংবা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাথটাবে স্নান করার ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। নেশার ঘোরে যখন তখন অঘটন ঘটে যেতে পারে। শ্রীদেবী ও ম্যাথু, দু’জনেই মদ্যপান করতেন। তবে মৃত্যুর সময় আদৌ দু’জনে মদ্যপান করে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
২) বাথটাবে স্নান করার সময় আগেভাগে জলের তাপমাত্রা দেখে নিতে হবে। জল অতিরিক্ত গরম থাকলে ছ্যাঁকা খাওয়ার ঝুঁকি থেকে যেতে পারে, তাই সাবধান!
মদ্যপান করে কিংবা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাথটাবে স্নান করার ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল।
৩) বাথটাবের আশপাশে হেয়ার ড্রায়ার, কার্লার না রাখাই ভাল। একান্তই কোনও হোটেলে সে সব থাকলে স্নানের সময় সেগুলির সুইচ অফ রয়েছে কি না, তা লক্ষ করতে ভুলবেন না যেন। নইলে সেই সব বৈদ্যুতিক যন্ত্র জলের স্পর্শে এলেও বড় বিপদ ঘটতে পারে।
৪) বাথটাবের মেঝে যেন পিছল না থাকে, সে দিকেও নজর দিতে হবে। নইলে পা পিছলে গিয়ে আঘাত লেগে যেতে পারে।
৫) বাথটাবে স্নান সেরে ওঠার সময়, বাথটাব থেকে সম্পূর্ণ জল বের করে দিয়ে তবেই ওঠুন। জল ভরতি বাথটাব থেকে ওঠার সময় পা পিছলে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাথটাব থেকে বেরিয়ে ভাল করে পা মুছে তবে হাঁটুন, নইলে পড়ে গিয়ে মাথায় ব্যথা লাগতে পারে।