সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। শরতের শুভ্র নীল আকাশ, বাতাসে শিউলী ফুলের গন্ধ আর চারদিকে আগমনীর গান। দূর থেকে ভেসে আসে ঢাকের শব্দ। পূজা মানেই মন্দিরে গিয়ে ঠাকুর দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো।
ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত এই পাঁচদিন যেন আনন্দের শেষ থাকে না। এই দিনগুলো নিজেকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেখতে চায় সবাই। আর তাই পূজার এই সময়টাতে আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই পোশাক নির্বাচন করতে হবে। তবে প্রথমেই স্থির করে নিতে হবে আপনি কিভাবে সাজবেন।
পূজোর দিনের সাজ: ষষ্ঠীর দিন থেকেই মূলত পূজার সাজ শুরু হয়। কারণ ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত আপনি সাজতে পারবেন একদম মনের মতো করে। নতুন জামা যেমন হবে ট্রেন্ডী ফ্যাশনেবল সেই সাথে হতে হবে আরামদায়ক। ষষ্ঠী ও সপ্তমীর স্নিগ্ধ সকাল শুরু করতে পারেন হালকা সাজের মধ্যদিয়ে। পূজোর সময় দিনের বেলার সাজ বেশ উজ্জ্বল তবে হালকা বেজ মেকাপে রাখা ভালো হবে। কারণ দিনের বেলা মন্দিরে অঞ্জলি দেওয়ার সময় যেন চেহারায় স্নিগ্ধভাব বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে দেশীয় বুটিক হাউজের কটন সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পড়তে পারেন। মেকাপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ব্যাবহার না করে বিবি অথবা সিসি ক্রিম ব্যাবহার করতে পারেন। এতে ন্যাচারাল লুক আসবে।
যেভাবে মেকাপ করবেন: বিবি ক্রিমের লাগানোর আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। এরপর ফেসপাউডার দিয়ে সেট করে নিতে পারেন। হালকা পিচ, গোলাপী বাদামী রঙের ব্লাশন দিতে পারেন। আইশ্যেডো না দিয়ে মাশকারা, আইলাইনার বা কাজল পড়তে পারেন। পোশাকের রঙের সাথে মিলিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন লিপষ্টিক বা কোরাল অথবা যেকোন ন্যুড রঙের লিপষ্টিক। কানে গলায় পরে নিতে পারেন ম্যাচিং হালকা গহনা।
অষ্টমী ও নবমী: পোশাকে প্রাধান্য দিতে পারেন গাঢ় রঙের পোশাক। লাল, মেরুন, মেজেন্টা অথবা সিগ্রীন কালার। দিনের শুরুতে হালকা সাজই ভালো। মুখ ক্লিন করে সানস্ক্রিন ক্রিম লাগানোর পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে পারেন। প্রাইমার লাগিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে ফাউন্ডেশন লাগতে পারেন। এরপর কন্সিলর লাগিয়ে কম্পেক্ট পাউডার দিয়ে মেকাপ সেট করে নিন। হালকা রঙের আইশ্যাডো দিয়ে চোখ সাজাতে পারেন। সাথে আইলাইনার ও মাশকারা লাগাতে পারেন। ঠোঁটে থাকতে পারে ন্যুড কালার লিপষ্টিক। চুল খোপা করে, ফুল লাগাতে পারেন। কানে পড়তে পারেন ঝুমকো, সাথে হাত ভরে চুড়ি।
পূজায় রাতের সাজ: সন্ধ্যার পর প্যান্ডেলে ঘুরতে যান অনেকে। তখন একটু গাঢ় করে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন। তাই মেকাপে একটু ভারি সাজই ভালো। মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর ময়েশ্চারাইজ লাগিয়ে নিন। চোখের আশেপাশে দাগ থাকলে সেটা ঢাকার জন্য স্কিন টোনের সাথে মিলিয়ে লাগিয়ে নিতে পারেন কন্সিলর। এরপর স্কিন শেড মিলিয়ে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিন। বিউটি ব্ল্যান্ডার বা স্পঞ্জ দিয়ে বেইজ মেকাপ করে নিন। আইব্রো আকিয়ে গাঢ় আইশ্যাডো দিতে পারেন। চোখে লাগাতে পারেন ফলস আইল্যাশ। সাথে দিয়ে নিবেন আইলাইনার ও মাশকারা। ব্লাশ, কন্টরিং এরপর হাইলাইট করতে পারেন। ঠোঁট একে নিতে পারেন গাঢ় রঙের লিপষ্টিকে।
শাড়ির ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন দেশীয় সিল্ক বা মসলিন শাড়ি। ব্লাউজে যদি ভারী কাজ থাকে বেছে নিতে পারেন হালকা গহনা। যদি ব্লাউজ হালকা থাকে সেক্ষেত্রে ভারি মেটালের গহনা ভালো হবে। চুল পরিপাটি করে বেঁধে নিতে পারেন। লম্বা চুলে বেণী করে লাগাতে পারেন ঝুমকা। সেই সাথে কপালে টিপ পরতে ভুলবেন না।
দশমী: শারদীয় পূজার প্রধান আকর্ষণ হলো দশমী। এ দিনের সাজ মানেই সাদা শাড়ি লাল পাড় সাদা শাড়ি। অথবা একদম লাল রঙের শাড়ি বা সাদা জামদানি। ব্লাউজে আনতে পারেন বৈচিত্র। স্লিভলেস, সার্কুলার কাপ, বাটারফ্লাই, রোলআপ ডিজানের স্লিভ দিয়ে ব্লাউজ বানাতে পারেন। সব বয়সের নারীরাই এই রঙগুলো বেছে নিতে পারেন। অনেকে আবার নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন প্রতিমার মতো করে। গাঢ় কাজল, টানা আইলাইনার দিয়ে চোখ সাজাতে পারেন। লাল লিপষ্টিক হালকা সাজ। এদিন ঠাকুরকে সিঁদুর পড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেরাও মেতে উঠেন সিঁদুর খেলায়। যদি কেউ একান্তই শাড়ি পড়তে না চায় সেক্ষেত্রে লাল জামা ও পায়জামা।