নভেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৩:৫০ পিএম
আমরা প্রায়ই বই পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে শুনতে পাই, কিন্তু বই পড়া কিভাবে আমাদের গঠন করে?
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন যারা ছোট বেলায় বই পড়ে নিমগ্ন হয়ে কাটিয়েছেন, বই পড়ার এই সুন্দর অভ্যাসটির কারণে তাদের মধ্যে বিকাশিত হয় কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য। আসুন সন্ধান করি সেসব দিকের:
সহানুভূতি বাড়ে
ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন বই পড়ে সময় কাটিয়েছেন, হোক উপন্যাস বা ছোট গল্প, তারা খুব সহজেই অন্যকে খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। এটি কাকতালীয় নয় সত্যি। উপন্যাস পড়ার কারণে প্রতিমুহূর্তেই আমরা অন্য একটা ক্যারেক্টারে পা বাড়াতে থাকি, সে চরিত্রের হাসি ,আনন্দ, কান্না ইত্যাদি অনুভব করতে থাকি, যেন সব অনুভূতিগুলো আমাদের নিজের, চরিত্রের সংগ্রাম নিজের সংগ্রাম বলে মনে হয়।
বিস্তৃত শব্দভান্ডার
খেয়াল করলেই দেখা মেলে সুন্দরভাবে কথা বলতে পারা মানুষের কথা কবিতার মত স্নিগ্ধ , শান্ত, আবার মায়াময় হয়ে উঠে , শব্দ নিয়ে এই মজার খেলা উন্নত ব্যক্তিত্ব বহন করে, সাথে ভাষার প্রতি দক্ষতা বাড়ায়, আরও বৈচিত্র্যময় শব্দভান্ডারের দিকে নিয়ে যায়। অনুভতি প্রকাশ হয় আরো সাবলীল।
আরামদায়ক নির্জনতা
ঘণ্টার পর ঘণ্টা আরামে একাকীত্ব কাটানোর সক্ষমতা অর্জন করা শুরু করা হয় বই পড়ার সাথে সাথে , আমরা বলে থাকি বই ভালো বন্ধু, মাঝেমধ্যেই বই হয়ে ওঠে ভালো সঙ্গী হয়ে। মোহনীয় চরিত্র এবং রোমাঞ্চকর প্লটগুলোর সাথে সময় চলে যায়, আবার ধরুন থিউরিটিক্যাল বই হলে সে ভাবনা ভেবে নিজের সাথে বোঝাপড়ার জন্যে সময় পাওয়া যায়। তাই নির্জনতা তাদের জন্যে উপহার , নিজের সাথে ,নিজের ভাবনার সাথে বোঝাপড়ার সময়।
উচ্চতর মনোযোগ
যাদের বই পড়ে অভ্যস্ত তাদের মনযোগ ক্ষমতা বাকিদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী। বর্তমান বিশ্বের জটিল সমস্যার মধ্যে একটি হলো খুব সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়া। আপাতদৃষ্টিতে এই সমস্যা বড় মাপের মনে না হলেও বিভ্রান্ত হওয়ার এই জটিলতা আসলে ভয়ংকরভাবে বেড়েছে। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। যারা বই পড়েন তারা বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকার সময়ে বাইরের কোলাহল থেকে নিজেকে সংরক্ষিত রাখেন,তাই তাদের বিভ্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কম।
ওপেন মাইন্ডনেস
একজন নিয়মিত পাঠক প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও বিভিন্ন ধারণার দ্বারা নিজেকে মুক্ত করেন যাবতীয় গোঁড়ামি মানসিকতা থেকে। বই আমাদের অসীম বৈচিত্র্যের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, দর্শন ও জীবনধারা আমাদের কাছে প্রকাশ করে। বলতে গেলে বিভিন্ন লেন্সের মাধ্যমে আমাদের বিশ্ব দেখায়, এতে করে আমরা প্রতিনিয়তই নিজস্ব বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করতে শিখি, এই বিস্তৃত মানসিকতা আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের সম্পদ হতে পারে এবং সহযোগিতা , বোঝাপড়া ,এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে।
ভালো লেখার দক্ষতা
একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যারা বইপ্রেমী, তাদের লেখা যারা বই পড়েন না তাদের থেকে বেশি পরিমার্জিত হয়। এর কারণ নিয়মিত বই পড়ার কারণে লেখার শৈলী ,কাঠামো টোন ইত্যাদি উন্মোচিত হয় যা আমরা সচেতন বা অবচেতন মনে নিজের লেখায় প্রকাশ করি। যে কোন ক্ষেত্রেই হোক না কেন নিয়মিত পাঠকরা প্রায়শই স্পষ্টতা এবং সৃজনশীলতার সাথে তাদের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করে। যারা বই পড়েন নিয়মিত তাঁরা তাদের নিজেদের লেখার জন্যেও বেশ প্রশংসিত বন্ধুমহলে।
মানসিক স্থিতিস্থাপকতা
যারা বই পড়েন নিয়মিত তাঁরা তাদের চরিত্রগুলোর ছোট থেকে শুরু করে বড় ভ্রমণের অংশীদার হন এতে করে তাঁরা আবগের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, গল্প যখনই আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে আমরা জীবনের ক্ষতি, প্রেম, ভালোবাসা, জয় ইত্যাদি বিভিন্ন মানসিক ল্যান্ডস্কেপের মধ্য দিয়ে দেখতে পাই, এতে করে আমাদের মানসিক স্থিতিস্থাপকতা বিকশিত হয়। আমরা প্রিয় চরিত্র থেকে শিখি যে আমরাও সাহসের সাথে প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে পারি এবং ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারি। বই পড়া যে শুধু আমাদের বিনোদন ও শিক্ষাই দেয় না বরং আমাদের আত্মাকে শক্তিশালী করে।
জ্ঞানের প্রতি ক্ষুধা
যারা নিয়মিত বই পড়েন, স্বাভাবিকের তুলনায় তাদের জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ও আনুগত্য আলাদা করে চোখে পড়ার মত, তারা প্রতিনিয়ত নতুন জিনিস শিখতে থাকেন, একই বিষয় অন্য দৃষ্টি দিয়ে, ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের চোখে দেখার ফলে, বার বার আগের মতবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও উত্তর খোঁজা এবং কখনোই জানার ইচ্ছা শেষ হতে না দেয়া এসব ইতিবাচক আচরণ, বই পড়ার ফলে পাঠকদের মধ্যে,সচেতন বা অবচেতন মনেই হোক না কেন তৈরি হয়।
কল্পনাপ্রসূত চিন্তা বাড়ে
একজন নিয়মিত বই পড়ুয়া লোক গৎবাঁধা চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আরো বিশাল আকারে ভাবতে পারেন, তাদের চিন্তার পরিধি বেশ বড়, এই ইতিবাচক, আচরণের দ্বারা তারা সমস্যা অথবা জটিল রহস্যের সমাধান করে অভিনব উপায়ে, এই কল্পনাপ্রসূত চিন্তা বর্তমান পরিস্থিতির থেকে বড় করে ভাবতে সহায়তা করে, আপনি যদি সৃজনশীলতা ও মৌলিকত্বের খোঁজ করেন তাহলে বই পড়ার অভ্যাসটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।
সুন্দর করে গল্প বলার প্রশংসা অর্জন
প্রায়ই খেয়াল করলে দেখা যাবে যারা অনেক বই পড়েন, তাঁরা গল্প বলা শুরু করলে আড্ডা মাতিয়ে রাখা তাদের জন্যে খুবই সহজ বিষয়, তাদের সুন্দর করে গুছিয়ে বলার এই সহজাত প্রবৃত্তি লক্ষ্য করা যায় ছোট থেকেই কারণ বই পড়তে পড়তে তাঁরা বিভিন্ন ভাবে গল্পের প্লট বর্ণনা করা শিখে যান। আরো ভাবে গল্প বুনতে পারেন ও কেবল ব্যক্তিগত জীবনেই নয় বরং পেশাদার জীবনেও ভালো করতে পারেন।