বরফজলে ডুবে থাকার ঝোঁক বাড়ছে তরুণদের মধ্যে, কিন্তু কেন?

সায়কা সিদ্দিকী

নভেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৫:৩৯ পিএম

বরফজলে ডুবে থাকার ঝোঁক বাড়ছে তরুণদের মধ্যে, কিন্তু কেন?

ছবি: সংগৃহীত

ইদানিং প্রায় মানুষদের দেখা যায় বরফ জলে মুখ ডুবিয়ে রাখতে । দেখে অনেকেই অবাক হয় যে এটা আবার কি? তবে দেখে অবাক হলেও বাস্তবে এটা কোনও স্টান্ট বা চ্যালেঞ্জ নয়, তরুণ প্রজন্মের কাছে এই কনকনে বরফজলে ঝাঁপ দেওয়া অনেকটা থেরাপির মতো। 

তাইতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলে প্রায়শই দেখা যায় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বাথটবে এমন বরফজলে গা ডুবিয়ে বসে রয়েছেন। মূলত সেলিব্রেটিরা এই থেরাপি নিয়ে থাকেন তাদের শরীর,মন এবং ত্বক ভালো রাখতে। তাদের সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে এই বরফের মধ্যে । 

এই থেরাপি নেয়ার তালিকায় রয়েছেন বলিউড তারকা কেটরিনা কাইফ, আলিয়া ভাট, হিনা খান, কারিনা কাপুর,তামান্না ভাটিয়া,হানিয়া আমির,কার্তিক আরিয়ান,রাকুল প্রিত সিং,বিদ্যুৎ জামাল,সামান্থা,আয়শা শারমা সহ আরও অনেকে।  বলিউড তারকা ছাড়াও এ তালিকায় আরও বিখ্যাত লোকজনও রয়েছে। 

তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, বরফজলে স্নান করার অভ্যাসে শরীর এবং মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও, তা সকলের জন্য উপযুক্ত নয়। বিশেষ করে বয়স্ক এবং শিশুদের ক্ষেত্রে তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

কিন্তু এই বরফজলে ঝাঁপ দিলে কী লাভ হয়? জেনে নেয়া যাক সে বিষয়ে...

(১) শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়:

বরফগলা জল দেহে সঠিক ভাবে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালন ভাল হলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছে যায় সহজেই।

(২) পেশির ব্যথা বা প্রদাহ কমে:

শরীরচর্চা করেই হোক বা অন্য যে কোনও কারণে, দেহে প্রদাহ হলে তা নির্মূল করতে পারে এই কনকনে ঠান্ডা জল। শরীরচর্চা করার পর পেশিতে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। সামান্থার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয় না। পেশির এই ব্যথা নির্মূল করতে পারে বরফ গলা জল।

(৩) অবসন্ন মন তরতাজা করে:

পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনের চাপ সামাল দিতেই কি সামান্থা এমন কনকনে জলে স্নান করছেন? চিকিৎসকেরা বলছেন, এমন ঠান্ডা জলে স্নান করলে এক প্রোটিনের ক্ষরণ বাড়ে। যা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

(৪) প্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত করে:

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে ঠান্ডা। অনেকেই মনে করেন, কনকনে ঠান্ডা জলে স্নান করলে চট করে ঠান্ডা লাগা, সংক্রমণজনিত সমস্যা বা ফ্লু-এর মতো রোগ প্রতিরোধ করা যায়। 

অনেকে ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও মেনে চলে এই বরফ থেরাপি—

১. অধিক তেলতেলে ভাব  তৈলাক্ত ত্বকের সব থেকে বড় সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করতে পারেন এই থেরাপি।

২. ব্রন সৌন্দর্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ব্রন কমাতে বরফ থেরাপি করাতে পারেন। এই থেরাপি লোমকূপে জমে থাকা তেল ও ময়লা বের করে দেয়। এমনকি, বাড়িতেও বরফের টুকরো নিয়ে ত্বকে ঘষতে পারেন। এতেও মিলবে সমান উপকার।

৩. চোখের নিচে ফোলা ভাব দূর করতে বেশ উপকারী বরফ থেরাপি। অনেকের চোখের নিচের অংশ ফোলা হয়। এই ফোলাভাব কমাতে বাজারে একাধিক প্রসাধনী রয়েছে। এই সব সমস্যা দূর করতে বরফ থেরাপি করে উপকার পাবেন।

৪. বলিরেখা দূর করতে বরফ থেরাপি করাতে পারেন। এই থেরাপি করলে ত্বকে বলিরেখা দূর হয়, তেমনই অল্প বয়সে বলিরেখা সমস্যা দূর হয়।

৫. ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে দূরে রাখতে করতে পারেন বরফ থেরাপি। বিভিন্ন ধরনের মেকআপের থেকে কিংবা সূর্যরশ্মির কারণে ত্বকে ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব বরফ থেরাপির গুণে। এতে দ্রুত উপকার মিলবে।

তবে এই বরফজলে স্নান করার পাশাপাশি কিন্তু এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এবার জেনে নেয়া যাক সেই  ক্ষতিকর বিষয়ে...

বরফজলে স্নান করলে কী ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়?

১) সারা শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে। কনকনে ঠান্ডা জলে ৫ থেকে ১০ মিনিট ডুবে বসে থাকলে আঙুল, হাত, পা-সহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।

২) বাথটব বা বরফ জমা লেকের জলে কিছু ক্ষণ ডুব দেওয়ার পর কোল্ড শকে চলে যেতে পারেন কোনও ব্যক্তি। শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, হৃদ্‌স্পন্দনের গতিও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

৩) বাইরের আবহাওয়ার সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে শরীরের মধ্যেই তাপ সঞ্চার করতে পারে। কিন্তু ঠান্ডা জলে বেশ কিছু ক্ষণ ডুবে থাকলে, স্বাভাবিক এই প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে ‘হাইপোথারমিয়া’ বলা হয়। যার ফলে দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে চলে যেতে পারে।

Link copied!