বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড

বিশেষ ‘২৯ ফেব্রুয়ারি’ হয়ে উঠলো বিষাদময়

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ১, ২০২৪, ০৫:০৯ এএম

বিশেষ ‘২৯ ফেব্রুয়ারি’ হয়ে উঠলো বিষাদময়

আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই ‘গ্রিন কোজি কটেজ’।

লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ আসে চার বছর পর পর। এরই বিশেষ দিন অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ যা চার বছর পর অতিরিক্ত এক দিন হিসেবে আসে। বিশেষ হিসেবেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে অনেকেই প্রিয়জনদের নিয়ে পা রেখেছিলেন রাজধানীর বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে। 

যে ভবনটিতে রয়েছে কাচ্চি ভাই, পিজ্জা ইন, স্ট্রিট ওভেন, খানাসসহ নামকরা ও জনপ্রিয় সব রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও ইলিয়েন, ক্লোজেস্ট ক্লাউডসহ পোশাকের জনপ্রিয় দোকান। নিচতলায় রয়েছে স্যামসাং ও গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার-এর শোরুমও। 

এক ভবনে এতকিছুর সমাহার যেখানে, স্বাভাবিকভাবেই সবসময় ভবনটিতে ব্যস্ততা লেগে থাকে। 

আরও পড়ুন : দুই সন্তানসহ মায়ের প্রাণ কেড়ে নিলো বেইলি রোডের আগুন

আর সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন রাত, লিপ ডে (২৯ ফেব্রুয়ারি), সন্ধ্যা- সবমিলিয়ে জনসমাগমে ও ব্যস্ততায় ভরপুর ছিল ‘গ্রিন কোজি কটেজ’। ব্যস্ততা ও সুখ সময়ের সেই মুহূর্তগুলো বিষাদের সময়ে পরিণত হতে বেশি সময় লাগলো না। 

আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নিয়েছে নারী ও শিশুসহ ৪৪ প্রাণ। পরিবার, সন্তান, বন্ধু, আত্মীয় হারিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় আহাজারি করছেন স্বজনরা। অনেকে স্বজনদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করছেন নিজেদেরই। 

বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের শিক্ষক লুৎফুন নাহার ও তার মেয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী জান্নাতি তাজরীন। স্ত্রী ও সন্তানের মরদেহ শনাক্ত করে মৃত্যুর জন্য নিজেকে অপরাধী বলে দায়ী করলেন গোলাম মহিউদ্দিন। তিনি জানান, স্ত্রীর দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে কাচ্চি ভাইয়ে যাওয়ার পরামর্শ মহিউদ্দিনই দিয়েছিলেন। বিলাপ করতে করতে নিজেকেই স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যুর জন্য দায়ী করছিলেন তিনি। 

আরও পড়ুন : ‘গ্রিন কোজি কটেজের’ সব তলাতেই ছিল গ্যাস সিলিন্ডার; এমনকি সিঁড়িতেও

দুই সন্তানকে নিয়ে বইমেলা থেকে ঘুরে এসে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের কাচ্চির স্বাদ নিতে গিয়েছিলেন শান্তিনগরের বাসিন্দা পপি দাশ। আগুনের দাবানল বাঁচতে দিলো না তাদেরও। 

২ দিন পরই আকাশে উড়াল দেয়ার কথা ছিল মালয়েশিয়ায় ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের শেষ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রিয়ার। যাওয়ার আগে ভিকারুননেসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী ছোট বোন আরিশা ও সিটি কলেজ পড়ুয়া খালাত বোন লিমুকে নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন ‘গ্রিন কোজি কটেজ’-এর এক রেস্টুরেন্টে। 

আরও পড়ুন : নারী-শিশুসহ মৃতের সংখ্যা ৪৪; প্রাণ হারালেন ‘কাচ্চি ভাই’য়ের হিসাবরক্ষক

তারপর আর ফেরা হলো না ঘরে। দুই বোনকে চিরকালের মতো আকাশে উড়াল দিলেন রিয়া। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের মর্গে তিন বোনের মরদেহ শনাক্ত করে উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েন রিয়ার বাবা কোরবান আলী। 

অন্যদিকে মৃত্যুর তালিকায় জায়গা নিয়েছেন বুয়েটের দুই শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন ও লামিসা ইসলাম। লামিসার বাবা পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি। 

মরদেহর সারি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন এমবিএর ছাত্র নুরুল ইসলামের মরদেহও খুঁজে পেলেন তাঁর বন্ধুরা।

Link copied!