‘ভারতের দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা নজরুল লেখেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর ভারতের অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ থেমে নেই। ভারতের নিজের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ সেটা নিয়ে তাদের সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর।’
আইন উপদেষ্টা আরও লেখেন, ‘আমরা নিজেরাও দেখেছি, ছাত্র সংগঠন, মাদ্রাসা ও রাজনৈতিক দলসহ বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রতিক দুর্গাপূজার সময় কিভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছে। সর্বশেষে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মম ও উসকানিমূলকভাবে হত্যার পরও বাংলাদেশের মুসলমানরা অসীম সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।’
এর আগে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার এবং জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার ঘটনায় গত মঙ্গলবার উদ্বেগ জানায় ভারত।
বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, চিন্ময়কে গ্রেপ্তার এবং জামিন আবেদন নাকচ করায় ভারত উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার পর এ ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং দেবতার অবমাননা ও মন্দিরে চুরি-ভাঙচুরের একাধিক নথিভুক্ত ঘটনা রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসকন বাংলাদেশ থেকে গত জুলাইয়ে বহিষ্কৃত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাগারে পাঠান চট্টগ্রামের আদালত। সেদিন চিন্ময়ের অনুসারী এবং পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষে হয়। এ সময় সরকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাইফুল ইসলামকে হত্যা করা হয়।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের সংসদেও বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়। লিখিত প্রশ্নোত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কৃতি বর্ধন সিং বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব বলে মনে করছে ভারত।
এদিকে কংগ্রেস নেত্রী ও সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যাণ্ডেলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার ও এ নিয়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতার সংবাদ অত্যন্ত চিন্তাজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কোনো ধর্মের ওপরেই আঘাত আসুক আমি চাই না। এখানে ইসকনের যিনি আছেন, তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এটা যেহেতু অন্য একটি দেশের বিষয়, তাই কেন্দ্রীয় সরকারকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ইস্যুতে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের পাশেই আছি।’
এছাড়াও বিজেপি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেতা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী।