পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতগুলোতে রাতের আঁধারেও সমুদ্রের পানি আলোকিত দেখা যায়। মূলত ডায়নোফ্ল্যাজেলেট নামক এক প্রকার এক কোষী প্ল্যাঙ্কটনের জন্য দায়ী। এদের খালি চোখে দেখা যায় না । সমুদ্রের ঢেউয়ের তীব্র গতির সাথে যখন এদের সংঘর্ষ হয় তখন এরা আলোকিত হয়ে ওঠে। এ ঘটনা “China’s Blue Tears” নামেও পরিচিত। তবে আমাদের বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতে এমন আলোক দ্যুতি দেখা যায় খুব কম,নেই বললেই চলে।
সমুদ্রের পানির এই রং বদল দেখতে হলে সূর্যাস্তের কমপক্ষে দুই ঘণ্টা পর চারিদিক ভালোভাবে অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তবে এ ঘটনা কিন্তু সারা বছর জুড়ে দেখতে পাবেন না । কিছু কিছু সমুদ্র সৈকতে এ প্ল্যাঙ্কটনগুলো এত বেশি পরিমাণে বংশ বিস্তার করে যে তা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়।
কিন্তু কেন এমন হয়! আজ জানব সেই কারণটাই।
আমাদের সৌরজগতে আমাদের গ্রহ ছাড়া অন্য কোথাও জীবের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে পৃথিবীতে জীব প্রজাতির সংখ্যা ২০ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ কোটি পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হয় । এদের মধ্যে প্রায় ১৭ লক্ষ প্রজাতির জীব সম্পর্কে তথ্য নথিভুক্ত করা রয়েছে। ধারণা করা হয় পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৫০০ কোটির বেশি প্রজাতির জীবের আবির্ভাব হয়েছে এবং এদের শতকরা ৯৯ ভাগই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
পৃথিবীতে থাকা নানান প্রাণীর নানান সব বৈশিষ্ট্য। এমনই এক অন্যরকম বৈশিষ্ট্য হলো বায়োলুমিনিসেন্স। বাংলায় বলতে গেলে জীব দ্যুতি। আমাদের জন্যে সব থেকে পরিচিত উদাহরণ জোনাকি পোকা। স্থলে বাস করে এমন প্রাণিদের মধ্যে বায়োলুমিনিসেন্স খুব একটা দেখা না গেলেও সমুদ্রের প্রাণীদের ক্ষেত্রে বায়োলুমিনিসেন্স কিন্তু খুবই স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। সমুদ্র তলদেশের প্রায় ৭৬% প্রাণী বায়োলুমিনিসেন্স ।
সমুদ্রের ২০০-১০০০ মিটার গভীরে গেলেই এমন কিছু জীবের দেখা মেলে যারা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের দেহে আলো তৈরি করতে পারে । এই সমস্ত জীবেদের দেহ থাকা লুসিফেরিন ও লুসিফারেজ নামক দুই পদার্থ যা O2 এর উপস্থিতিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় রাসায়নিক শক্তি পরিবর্তিত হয় আলোকশক্তিতে । এই বিক্রিয়ার নাম লুসিফারিন-লুসিফারেজ বিক্রিয়া। লুসিফারিন-লুসিফারেজ বিক্রিয়াই একমাত্র পদ্ধতি নয় যার দ্বারা প্রাণী আলো নিঃসরণ করে। Parchment Worm নামে পরিচিত সামুদ্রিক জীবটি লুসিফারিনের বদলে অ্যাকিয়োরিন নামের অন্য একধরণের ফটোপ্রোটিন কাজে লাগায়। এই আলো এ ধরনের জীবের খাবার খোঁজা, খাদ্যকে আকর্ষণ করা, ছদ্মবেশ ধারণ এমনকি আত্মরক্ষাতেও সাহায্য করে ।
অনেকেই মনে করেন প্রাণী শরীরে বায়োলুমিনেসেন্সের প্রধান কারণ বায়োলুমিনেসেন্ট ব্যাকটেরিয়া। ব্যাকটেরিয়া বায়োলুমিনেসেন্ট হতে পারে, তবে প্রধান কারণ কখনোই নয়। তবে সকল মৃত সামুদ্রিক জীবের দ্যুতি সৃষ্টির পেছনের ঘটনা এই বায়োলুমিনেসেন্ট ব্যাকটেরিয়া। এছাড়া অনেক দ্যুতিহীন জীবিত প্রাণীও পরজীবি ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দ্যুতি সৃষ্টি করতে পারে। সমুদ্রের তলদেশের কিছু তিমি মাছের দেহেও এমন আলোক দ্যুতি দেখা যায়, সেক্ষেত্রে তারা শিকার করার ধরনের পরিবর্তন আনে।