জল্পনার ৩৭৫ বছর শেষে মিলল অষ্টম মহাদেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এপ্রিল ৭, ২০২৩, ০৯:২৯ পিএম

জল্পনার ৩৭৫ বছর শেষে মিলল অষ্টম মহাদেশ

সবাই জানি সাতটি মহাদেশের কথা। কিন্তু প্রায় ৩৭৫ বছরের জল্পনার পর ভূতাত্ত্বিকেরা জানালেন নতুন এক মহাদেশের কথা। যার নাম জিল্যান্ডিয়া। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত ওই মহাদেশের অবস্থানের বিষয়ে জানান ভূ-তাত্ত্বিকরা।

২০১৭ সালে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব জিওগ্রাফার এবং আমেরিকান জিওলজিক্যাল সোসাইটি সমুদ্রতলে ম্যাপিং, পাথরের নমুনা বিশ্লেষণ ও টেকটোনিক প্লেটের ভূতাত্ত্বিক পরীক্ষার পর মহাদেশটির অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করে। 

 

এর আগে ১৬৪২ সালে প্রথম এই মহাদেশের অস্তিত্বের কথা জানান ডাচ ব্যবসায়ী ও নাবিক আবেল তাসমান। তখন তিনি ‘দক্ষিণ মহাদেশ’ বা টেরা অস্ট্রালিস আবিষ্কারের নেশায় মরিয়া ছিলেন। তেমন কোনো ভূখণ্ডের খোঁজ না পেয়ে একপর্যায়ে তিনি অবতরণ করেন নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণের এক দ্বীপে। সেখানে স্থানীয় আদিবাসী মাওরিদের সঙ্গে পরিচিত হন। 

মাওরিদের সঙ্গে কথা বলেই তিনি দ্বীপটির আশপাশের ভূমি সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য জানতে পারেন। এর মধ্যে দ্বীপটির পূর্বদিকে পানিতে নিমজ্জিত বৃহৎ এই স্থলভাগের কথাও জানতে পারেন। মাওরিদের ভাষায় এটিকে টে-রিউ-এ-মাউয়িই বলা হয়। এ ছাড়া আবেল তাসমানের নামের সঙ্গে মিলিয়ে জিল্যান্ডিয়াকে তাসমান্টিস নামেও ডাকা হয়। 

এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের মতো সুপরিচিত মহাদেশগুলোর মতো সাধারণ নয় প্রায় ১৮ লাখ ৯০ হাজার বর্গমাইল আয়তনের এই মহাদেশ। বেশির ভাগ এলাকা পানিতে ডুবন্ত হলেও এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট দ্বীপ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে কিছু স্থলভাগ রয়েছে। যেমন নিউজিল্যান্ড ও নিউ ক্যালেডোনিয়া।

২০১৭ সালে জিল্যান্ড ক্রাউন রিসার্চ ইনস্টিটিউট জিএনএস সায়েন্সের ভূতাত্ত্বিকেরা মহাদেশটির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হন। ভূতত্ত্ববিদ নিক মর্টিমার পুরো বিষয়টি নিয়ে সংগঠিত হওয়া গবেষণার নেতৃত্ব দেন। 

তিনি বলেন, ‘জিল্যান্ডিয়া এখন বিশ্বের অষ্টম মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃত। তবে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি এই গ্রহের অন্য মহাদেশগুলো থেকে আলাদা। মহাদেশটির বেশির ভাগ অংশই প্রায় ২ কিলোমিটার পানির নিচে ডুবন্ত। পানির এত গভীরে অবস্থান হওয়া সত্ত্বেও জিল্যান্ডিয়া গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। কারণ এই আবিষ্কার পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের ওপর আলোকপাত করে এবং ও যে শক্তিগুলো পৃথিবীকে বর্তমান আকৃতি দিয়েছে তার জানান দেয়।’ 

জিএনএস সায়েন্সের ভূতাত্ত্বিক অ্যান্ডি টুলোচ বলেন, ‘একটি স্পষ্ট বিষয় উন্মোচিত হতে কখনো কখনো যে অনেক সময় নিতে পারে, জিল্যান্ডিয়ার আবিষ্কার তার একটি উদাহরণ। তবে বৃহৎ এই ভূখণ্ড গন্ডোয়ানা থেকে কীভাবে আলাদা হয়ে গেছে, তা আজও বুঝতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।’ 

বিজ্ঞানীদের ধারণা, জিল্যান্ডিয়া ৫০ কোটি বছর আগে গন্ডোয়ানা নামে একটি বৃহৎ মহাদেশের অংশ ছিল, এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা ও পূর্ব অস্ট্রেলিয়া। গন্ডোয়ানা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ৮৩-৭৯ মিলিয়ন বছর আগে এটি পানিতে তলিয়ে যায়। 

সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

Link copied!