জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে গত ১৫ আগস্ট মুক্তি পায় সেলিম খান ও শামীম আহমেদ রনী পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘আগস্ট ১৯৭৫’।
চলচ্চিত্রটিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের রাত ও পরের দিন দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের বিভিন্ন ঘটনা ও তার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। শুরুতেই এক নেপথ্য কন্ঠের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির একটি ধারণা দেওয়া হয়।
অনেকটা ডকুড্রামার আদলে ঐতিহাসিক ওই সময়গুলোকে পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সময় যে বাস্তব চরিত্রগুলো বিভিন্ন অবস্থানে ছিল তাদেরকে উপস্থাপন করা হয়েছে। দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ওইসব চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
চলচ্চিত্রের উল্লেখযোগ্য একটি চরিত্র খন্দকার মোশতাক আহমেদ। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। এছাড়া, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের চরিত্রে তৌকির আহমেদ, সাংবাদিক ও প্রয়াত সংসদ সদস্য বেবী মওদুদ চরিত্রে মাসুমা রহমান নাবিলা, কনস্টেবল সিরাজুল হক চরিত্রে আনিসুর রহমান মিলন, বঙ্গবন্ধুর জানাজার নামাজ পড়ানোর ইমাম চরিত্রে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের দেখা মিলেছে এই চলচ্চিত্রে। টুংগীপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে দেখা গেছে অভিনেতা ফারুক আহমেদ, প্রাণ রায় সহ আরো বেশ কিছু পরিচিত মুখ।
এতো গুণী অভিনেতা অভিনেত্রীদের ভিড়ে যে চলচ্চিত্র নির্মিত সেখানে সামান্য সময়ের পর্দায় ওইসব কলাকুশলীদের উপস্থিত করে পরিচালকদ্বয় কতটুকু সফল হয়েছেন তা নিয়ে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন থেকেই যায়, বিশেষ করে দূর্বল সংলাপ রচনার জন্য।
চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্যে চরিত্রগুলোর সংলাপ যদি একটু সংক্ষিপ্ত করা যেতো তাহলে অনেকটাই দূর হতো একঘেয়েমি। মেজর ডালিম এবং খন্দকার মোশতাকের চরিত্রের মাধ্যমে চিত্রনাট্যে আরও পরিপূর্ণতা আনা যেতো উত্তেজনার পরশ দিয়ে।
শিল্পনির্দেশনা অনুকূলে থাকলে দৃশ্যায়ন সৌন্দর্যময় ও বাস্তবসম্মত হতে পারতো। টুংগীপাড়ার সেট বা খন্দকার মোশতাকের অফিস কক্ষ নির্মাণে বেশ অপরিক্বতার ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। যে কারণে বেশ কিছু দৃশ্য মানানসই হয়নি। সংগীতায়োজনের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের শেষাংশে একটি গানের পুনরাবৃত্তি না করলে বঙ্গবন্ধুর দাফনের সময়কার দৃশ্যগুলো হতে পারতো আরও মর্মস্পর্শী।
তারপরও ঐতিহাসিক ও হৃদয়বিদারক একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য শাপলা মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের এটি একটি ভালো প্রয়াস বলাই যায়।তবে সংলাপ রচনা, সেট নির্মাণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিচালকদ্বয় আর একটু সচেতন থাকলে ‘আগস্ট ১৯৭৫’ নিঃসন্দেহে দেশীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি অনন্য দলিল হয়ে থাকতো!