ফেডারেশন কাপের ফাইনালে জয় পেল ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। টাইব্রেকে তারা আবাহনীকে হারিয়েছে। নির্ধারিত ১২০ মিনিট পর ৪-৪ গোলের সমতা ছিল ম্যাচে। ফলে ম্যাচ টাইব্রেকে নিয়ে যেতে হয়।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ঐতিহাসিক ফাইনাল হয়েছে। যেখানে মোহামেডানের অধিনায়ক ও ফুটবলার সোলেমান দিয়াবাতে একাই ৪ গোল করেন। অথচ এই ম্যাচে প্রথমার্ধে আবাহনী ২-০ গোলের লিডে ছিল।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ৩-৩ গোলে সমতায় শেষ হয়। পরে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে মোহামেডান পেনাল্টি থেকে লিড নেয়। আবাহনী আবার সেটা শোধ করে দেয়।
আবাহনীর তারকা কলিন্দ্রেস পেনাল্টি মিস করেন। আরো একজন আবাহনীর শুট থেকে গোল আদায় করতে ব্যর্থ হন। মোহামেডান ১টি মাত্র মিস করেছে।
মঙ্গলবার কুমিল্লার শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন কাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে ঢাকা আবাহনীকে ৪-২ গোলে হারিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় পর শিরোপা উৎসব করল মোহামেডান। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ৪-৪ গোলে ড্র ছিল। ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ একই চার গোল করেন দিয়াবাতে। টাইব্রেকারে মোহামেডানের পাঁচ শটের মধ্যে একটি মিস হয়। অন্যদিকে আবাহনী প্রথম চারটির মধ্যে দুটি মিস করে। মোহামেডানের বদলি গোলকিপার বিপু দুটি শট রুখে দেন। টাইব্রেকারে মোহামেডানের হয়ে গোল পেয়েছেন সুলেমানে দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার ও কামরুল ইসলাম। তৃতীয় শটে শাহরিয়ার ইমনকে ঠেকান গোলকিপার শহিদুল আলম সোহেল। বিপরীতে শুরুতে আবাহনীর রাফায়েল অগাস্তোর শট গোলকিপার আহসান হাবিব বিপু ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন। এমেকা ও ইউসেফ মোহাম্মদ গোল করলেও কলিনদ্রেসের শট রুখে দিয়ে বিপু হন জয়ের অন্যতম নায়ক।
২০০৯ এবং ২০২৩, চিত্রনাট্যে খুব একটা পরিবর্তন নেই। ১৪ বছর আগে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে আবাহনীকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান। এবারও তাই। তবে ভেন্যু এবং গোল সংখ্যায় কিছুটা পার্থক্য। সেবার আবাহনীকে টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা উল্লাস করেছিল সাদা কালোরা। এবার ৪-২ গোলে।
মালির ফরোয়ার্ড সুলেমান দিয়াবাতেকে দলে টেনে ভুল করেননি সাদা কালোরা, তা আরও একটি প্রমাণ করে দিলেন। পুরো ম্যাচে একাই দলকে টেনে নিয়ে গেলেন শিরোপা মঞ্চে। ১২০ মিনিটে আবাহনীর করা ৪ গোলের বিপরীতে হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেন। টাইব্রেকারেও গোল পেয়েছেন তিনি। তাইতো সর্বাধিক গোলদাতা, টুর্নামেন্ট সেরা এবং ফাইনাল সেরার পুরস্কারের জন্য অন্য কাউকে খোঁজার প্রয়োজন পড়েনি নির্বাচকদের।
অনেক দিন পর এমন একটি ফাইনাল দেখলেন দর্শকরা। ফাইনালের সব রসদ, উত্তেজনা আর শিহরন সবই ছিল ম্যাচে। ১৬ মিনিটে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও ৪৪ মিনিটে দানিয়েল কলিনদ্রেসের গোলে এগিয়ে বিরতিতে গিয়েছিল আবাহনী। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে যেন জেগে উঠে সাদা কালোরা। দ্বিতীয়ার্ধের ১১ মিনিটে মোহামেডানের সোলেমান দিয়াবাতে গোল করে জাগিয়ে তোলেন মোহামেডান গ্যালারি। এরপর ৬০ মিনিটে গোল করে স্কোরলাইন ২-২ করেন তিনি। ৬৬ মিনিটে এমেকা গোল করলে ম্যাচ আবার ঝুঁকে পড়ে আবাহনীর দিকে (৩-২)। কে জানতেন সোলেমান দিয়েবাতে ম্যাচটাকে নিয়ে যাবেন অতিরিক্ত সময়ে! ৮৩ মিনিটে গোল করে সোলেমান বুঝিয়ে দিলেন কেন এই ম্যাচের আবেদন দর্শকদের কাছে এত বেশি (৩-৩)। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ম্যাচ। কখনো আবাহনী কখনো মোহামেডান এগিয়ে যায়। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে লীড নেয় মোহামেডান। এবারও গোলদাতা অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে। বক্সের মধ্যে আবাহনীর ডিফেন্ডার তাকে ফাউল করেন। রেফারি আলমগীর সরকার পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি থেকে গোল করেন দিয়াবাতে (৪-৩)। ম্যাচে প্রথমবারের মতো এগিয়ে যায় সাদা কালোরা। মোহামেডানের নিয়মিত গোলকিপার সুজন আহত হলে বিপুকে নামান কোচ আলফাজ আহমেদ। বিপু নামার কিছুক্ষণের মধ্যে মোহামেডান গোল হজম করে। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে রহমত মিয়ার গোলে সমতা আনে আবাহনী। বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে গোল করেন রহমত (৪-৪)। ১২০ মিনিটেও মীমাংষা না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।