এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পাওয়া কে এই মহেন্দ্র কুমার মিশ্র?

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩, ০৬:১৭ পিএম

এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পাওয়া কে এই মহেন্দ্র কুমার মিশ্র?

পুরস্কার চালুর তিন বছরের মাথায় ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকে ভূষিত হলেন মহেন্দ্র কুমার মিশ্র নামের এক ভারতীয়। এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত তিনিই প্রথম ভারতীয়। মাতৃভাষার প্রচারে আজীবন সেবার জন্য ওড়িশার বিশিষ্ট এই ভাষাবিদ লোকসাহিত্যিককে এ স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই পদক তুলে দেবেন। এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের (আইএমএলআই) মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বাইরের দেশে নিজ দেশের ভাষার প্রচার-প্রসারে অবদান রাখার জন্য দেশের এবং দেশের বাইরের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক দেওয়া হয়।

১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বহুভাষিক শিক্ষা বিষয়ে ‘রাজ্য সমন্বয়কারী’ হিসেবে কাজ করেছেন মিশ্র। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষাগ্রহণের প্রবর্তকও তিনি। স্কুল শিক্ষায় বিপন্ন ভাষার প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ওডিশা ও ছত্তিশগড়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্কুল পাঠ্যক্রমে লোককথার ব্যবহারের ব্যাপকতা তাঁর হাত ধরেই হয়েছিল।

ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে ওডিশা সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার এবং ২০০৯ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠিত বীর শংকর শাহ রঘুনাথ পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি সম্মাননায় ভূষিত হন মহেন্দ্র কুমার মিশ্র। তিনি ২০০১ সালে ওডিয়াতে ফিনিশ মহাকাব্য, কালেভালার অনুবাদের জন্য ফিনল্যান্ডের তুর্কুর কালেভালা ইনস্টিটিউট তাঁকে সম্মানিত করে। তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সাহিত্য একাডেমির ভাষা উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য।

বিপন্ন ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে মিশ্র অসামান্য অবদান রেখেছেন। ইউনেসকো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পুরস্কারের জন্য মিশ্রর এই মনোনয়ন ভারতে মাতৃভাষা প্রচার ও সংরক্ষণে তাঁর অবদানেরই প্রমাণ। ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় তাঁর কাজের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। ভাষা ও সংস্কৃতিতে মিশ্রর অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাঁর কাজ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের শেকড় চিনতে আগ্রহী করবে।

বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সাল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই পদকের প্রবর্তন করে। পদকটি প্রদান করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে। প্রতি দুই বছর পরপর এই পদক দেওয়া হয়।

মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদানে স্বীকৃতির জন্য জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ তিন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০২১ সালে প্রথমবার ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ দেওয়া হয়।

জাতীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে অবদানের স্বীকৃতিসরূপ এই সম্মাননা পেয়েছেন খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ এবং লাতিন আমেরিকার আদি ভাষাগুলো নিয়ে কাজ করা বলিভিয়ার অনলাইন উদ্যোগ অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস বাংলাদেশ সরকারের এই সম্মাননা পেয়েছে।

২০১০ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আইন অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ২৩টি। এর মধ্যে আছে দেশে ও দেশের বাইরে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ক্ষুদ্র জাতিসমূহের ভাষা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, এতৎসংক্রান্ত গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা, ভাষা বিষয়ে গবেষণা-জার্নাল প্রকাশনা, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন, বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণমালার জন্য একটি আর্কাইভ নির্মাণ, সংরক্ষণ ও পরিচালনা, ভাষা বিষয়ে একটি জাদুঘর নির্মাণ, আন্তর্জাতিক মানের লাইব্রেরি ও গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করা।

জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারীদের স্মরণে বাংলাদেশে দিনটি ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

Link copied!