মাঠের লড়াইয়ে নেই তবুও ফাইনালে ইতালি থাকবে মাঠে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ১৬, ২০২২, ০৪:৪৬ পিএম

মাঠের লড়াইয়ে নেই তবুও ফাইনালে ইতালি থাকবে মাঠে

হিসেবটা খুব সহজ। যে দলই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠুক না কেন সেখানে থাকবে ইতালি। অবাক হওয়ার মতোই বিষয়। কাতার বিশ্বকাপে মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা হয়নি ইতালির তাহলে ফাইনালে থাকবে কিভাবে! মাঠের লড়াইয়ে না থাকলেও ৫০ বছর ধরে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়মিত জড়িয়ে আছে ইতালির নাম। সবাই যে লক্ষ্যে মাঠে ছুটে বেড়ায় সেই আকর্ষণীয় ট্রফিটি ৫০ বছর ধরে তৈরি হচ্ছে ইতালির ভাস্করের নকশায়। 

১৮ ক্যারেট খাঁটি সোনায় তৈরি, ১৪ ইঞ্চি লম্বা ও ১৩ পাউন্ড ওজনের এই আকর্ষণীয় চোখ ধাঁধানো ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিটি পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে প্রতিটি দল।

তবে শুরুতে কিন্তু এটি বিশ্বকাপের ট্রফি ছিল না। 

১৯৪৬ সালে তৈরি হয় প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি, যার নাম জুলে রিমে ট্রফি। প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনের কর্ণধার ফিফার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট জুলে রিমেকে সম্মান জানিয়ে নামকরণ করা হয় ট্রফিটির। 

১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ জিতলে আজীবনের জন্য তাদের দিয়ে দেয়া হয় ট্রফিটি। তারপর জন্ম হয় এখনকার এই ট্রফির। 

নতুন করে বিশ্বকাপ তৈরির জন্য ফিফা নকশা আহ্বান করলে ৭টি দেশের ৫৩ জন ভাস্কর বিশ্বকাপ ট্রফি জমা দেন, যার মধ্যে চূড়ান্ত হয় ইতালির মিলানের শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগার নকশা। ১৯৭১ সালে তৈরি হয় নতুন ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি। 

দুজন মানুষ হাত তুলে পৃথিবীকে আগলে রেখেছে-এমনটাই দেখা যায় এই বিশ্বকাপের নকশায়। তৈরির সময় এর ব্যয় ৫০ হাজার ডলার হলেও, বর্তমানে এটির বাজারমূল্য ২০ মিলিয়ন ডলার!

২০০২ সালে এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজ্জানিগা বলেন, আমি এই ট্রফিকে বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করে নকশা করেছিলাম। কিন্তু কোনো সুপার হিউম্যানের বীরত্ব ভেবে নয়। এটা প্রচলিত কোনো কাপ নয়।

ইতালি এই ভাস্করকে সম্মান জানাতে সে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘অর্ডার অব মেরিট অব দ্য ইতালিয়ান রিপাব্লিক’- য়ে ভূষিত করে। পরে ২০১২ তে সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান প্রদান করা হয়।

২০১৬ সালের নভেম্বরে ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় বিশ্বকাপ ট্রফি নকশাকারের। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে জর্জিও গাজ্জানিগা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছিলেন, বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা করার সময়ই তার বাবা বুঝেছিলেন যে তাঁর আঁকা নকশাটি দেখে অনেকে বুঝতে নাও পারেন, তাই তিনি সঙ্গে করে একটি প্লাস্টার মডেল নিয়ে গিয়েছিলেন।

জর্জিওর ভাষ্যে, ফিফার এই প্রতিযোগিতার শর্ত ছিল যে বিজয়ী তার কাজের স্বত্ত্বাধিকার রাখবে না। তাই সিলভিও গাজ্জানিগা বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা করে সরাসরি কোনো মুনাফা পাননি। বিশ্বকাপ ট্রফির নকশাকার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর তিনি আরও অনেকগুলো ট্রফির নকশা করেছেন, এটাই ছিল লাভ।

সিলভিও গাজ্জানিগা উয়েফা কাপ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপসহ অনেক আন্তর্জাতিক ট্রফির নকশা করেছেন। কিন্তু সবশেষে, বিশ্বকাপ ট্রফির জন্যই ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত সিলভিও গাজ্জানিগা।

গাজ্জানিগার পরিবার এখনো এই আইকনিক ট্রফি তৈরির অধিকার নিজেদের কাছে ধরে রেখেছেন। বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরির সময় গাজ্জানিগা মিলানের বার্তোনি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির হয়ে কাজ করতেন। আজ ৫০ বছর পরেও সেই প্রতিষ্ঠানের কাঁধেই রয়েছে বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরির গুরুদায়িত্ব।

অন্যান্য বছরের মতো এ বছরেও বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে কাতার যাচ্ছে গাজ্জানিগার পরিবার। গ্যালারিতে বসে দেখবেন সিলভিও গাজ্জানিগার বানানো বিশ্বকাপ ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরার সৌভাগ্য হয় কোন দলটির।

Link copied!