ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুই সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহত ওই দুই সাংবাদিকের নাম পিয়েরে জাকরজেউস্কি এবং ওলেক্সান্দ্রা কুভশিনোভা।
তারা দুইজনেই মার্কিন গণমাধ্যম ফক্স নিউজের সংবাদকর্মী ছিলেন।স্থানীয় সময় মঙ্গলবার খোলা চিঠিতে বিষয়টি জানান ফক্স নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুজান স্কট।
ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে হোরেঙ্কা নামক স্থানে সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়িতে রুশ সেনাদের গোলার আঘাত হানলে ৫৫ বছর বয়সী ফটো সাংবাদিক পিয়েরে জাকরজেউস্কি এবং ২৪ বছর বয়সী ওলেক্সান্দ্রা কুভশিনোভা নিহত হন।
এছাড়া এই ঘটনায় নিহত দুই সাংবাদিকের সহকর্মী ৩৯ বছর বয়সী বেঞ্জামিন হল আহত হন। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিকে, ফক্স নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুজান স্কট সংবাদকর্মীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক বার্তায় তিনি দুই সংবাদ কর্মীর মৃত্যুকে ফক্স নিউজের জন্য একটি ‘হৃদয়বিদারক দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। একইসঙ্গে ‘সাংবাদিক হিসাবে জাকরজেউস্কির আবেগ এবং প্রতিভা তুলনাহীন’ বলেও উল্লেখ করেছেন ফক্স নিউজের সিইও।
সুজান স্কট বলেন, পিয়েরে ছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রের ফটোগ্রাফার। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ইরাক থেকে আফগানিস্তান থেকে সিরিয়া পর্যন্ত ফক্স নিউজের প্রায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংবাদ কভার করেছিলেন।
ফক্স নিউজের উপস্থাপক বিল হেমার মঙ্গলবার সকালে জাকরজেউস্কির মৃত্যুর বিষয়টি ঘোষণা দিয়ে বলেন, প্রয়াত সাংবাদিক নিউজ চ্যানেলটির একজন 'কিংবদন্তি'। তাকে হারানোর ক্ষতি বিশাল। তিনি আমাদের সঙ্গে থাকাবস্থায় ইরাক, আফগানিস্তান এবং সিরিয়ার যুদ্ধ কভার করেছেন।
অন্যদিকে ফক্স নিউজের জাতীয় নিরাপত্তা সংবাদদাতা জেনিফার গ্রিফিন বলেছেন, জাকরজেউস্কি ‘ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়’ এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ‘সংবাদ তুলে আনার জন্য গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ ছিলেন।
ইউক্রেন সরকারের দাবি অনুয়ায়ি, জাকরজেউস্কি এবং কুরশিনোভার মৃত্যুতে যুদ্ধে সাংবাদিক নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫। এর আগে, গত ১৩ মার্চ ইউক্রেনের রাজধানীরকিয়েভের কাছে রুশ বাহিনীর গুলিতে নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক ব্রেন্ট রিনাউড মারা যান।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের ২১ তম দিন বুধবার রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী।
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশটির দুই ১৩ শ’ সেনা নিহত এবং রাশিয়ার ১২ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।
তবে ইউক্রেনের ওই দাবি উড়িয়ে দিয়ে রাশিয়া বলছে যুদ্ধে তাদের ৫০০ সৈন্য নিহত এবং ২ হাজার ৮৭০ জনের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, রুশ হামলায় এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ৩৬৪ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এই সংখ্যার চেয়ে অনেকে বেশি বলে মনে করছে সংস্থাটি।