ওসিসহ দুই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২, ০৭:০৪ পিএম

ওসিসহ দুই কর্মকর্তাকে  কারণ দর্শানোর নির্দেশ

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় হাতির শাবককে প্রশিক্ষণের নামে নির্যাতনের ঘটনায় সরকারি দুই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ১৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন ও কারণ দর্শানোর জবাব দাখিলের তারিখ ধার্য করে দেওয়া হয়েছে।

প্রশিক্ষণের নামে হাতি শাবককে নির্যাতন করা হচ্ছে-এমন সংবাদ জানতে পেরে মৌলভীবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান স্বপ্রণোদিত হয়েই গতকাল সোমবার ওই নির্দেশ দেন।

যাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী এবং মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জানুয়ারি থেকে হাতির বাচ্চা ‘টাইগার’ নির্মমতার শিকার হয়। খবর পেয়ে পর দিন ২৪ জানুয়ারি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে নির্যাতন বন্ধ হলেও তারা চলে গেলে আবার শুরু হয়।

আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়, তদন্তকারী কর্মকর্তাকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে হাতি নির্যাতনের ওই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের নাম-ঠিকানা, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণের নামে নির্যাতনে কয়টি হাতি মারা গেছে তার সংখ্যা, হাতি কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে তার মধ্যে কয়টি পালিত ও কয়টি বন থেকে সংগৃহীত, মৌলভীবাজার জেলায় হাতি লালন-পালন প্রশিক্ষণে কয়জনকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এবং হাতির প্রতি এ ধরনের নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধের জন্য আইনানুযায়ী কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে ।

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এবং প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ অনুযায়ী হাতির প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতন নিরসনে ওসি, জুড়ী থানা, মৌলভীবাজার এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের নিষ্ক্রিয়তা বেআইনি গণ্য করে কেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না মর্মে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

বলা হয়, ‘প্রশিক্ষণের নামে বর্বরতা’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি নিম্ন স্বাক্ষরকারীর (মুহম্মদ আলী আহসান, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জাস্টিস অব দ্য পিস, মৌলভীবাজার) দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রতিবেদনে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী থানাধীন গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের গহীন জঙ্গলে কথিত একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ঘটনা উল্লেখ করা হয়; যা নিম্ন স্বাক্ষরকারীর এখতিয়ারাধীন।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ‘হাদানি’ নামে প্রাচীন পদ্ধতিতে বন্য হাতি পোষ মানানো হয়। এতে হস্তীশাবককে গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। মাকে রাখা হয় দূরে। নির্দয়ভাবে শিশু হাতিকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। যথেষ্ট খাবার দেওয়া হয় না। এভাবে দুই মাস প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর সার্কাসের বিভিন্ন কসরত এবং গাছপালা পরিবহনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

হাতি শাবককে পোষ মানানো ও বশে আনার জন্য ইচ্ছামতো পেটানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরে আদালত বলেন, কোনো প্রাণীকে পোষ মানানোর জন্য নির্যাতনের প্রয়োজন নেই। হাতি একটি সংবেদনশীল প্রাণী, যার স্বাভাবিক অনুভূতি আছে। বাচ্চা হাতি পোষ মানানোর সময় তাকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করা হয়, যা সবশেষ পন্থা হিসেবে বিবেচিত।

আদালত বলেন, “হাতি সুরক্ষার জন্য দেশে প্রচলিত আইন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও এই বেআইনি ও প্রাচীন পদ্ধতিতে হাতি শাবককে পোষ মানানো হচ্ছে। নিষ্ঠুর নির্যাতনে অনেক হাতি শাবক মারা যায়।”

এবিষয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এখনো আদেশের কপি পাইনি। পেলে আদালতের নির্দেশমতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

Link copied!