দেশে পুরুষ নির্যাতন বন্ধে নেই কোন আইন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২০, ২০২১, ০৬:২৩ এএম

দেশে পুরুষ নির্যাতন বন্ধে নেই কোন আইন

দেশে নারী নির্যাতন দমন ও নারী অধিকার নিশ্চিতে আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন দমনে কোনো আইন নেই। অথচ বলা হয়, নারী-পুরুষ সমানাধিকার। বিশ্বের অনেক দেশে বেশ কিছু বেসরকারি সংগঠন ১৯ নভেম্বরকে 'আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস' পালন করে।

দেশে এ উপলক্ষ্যে শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে 'এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন' নামে একটি সংগঠন। তাদের দাবি 'বাংলাদেশে পুরুষরাই বেশি নির্যাতিত'। সেকারণে তারা মনে করেন, 'পুরুষ নির্যাতন' প্রতিরোধে আইনি সুরক্ষা থাকা দরকার।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত পুরুষরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু তাদের বিচার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ সমাজে উভয়ের সম্মতিতে নারী-পুরুষ শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন, কিন্তু মামলা হচ্ছে কেবল পুরুষটির বিরুদ্ধে। তাকে ধর্ষক বানানো হচ্ছে। যদি নারী-পুরুষের সম অধিকার হয়ে থাকে, তবে অপরাধের শাস্তিও সমান হওয়া দরকার। যারা সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন সেখানে নারী-পুরুষ উভয়ে দোষী। যদি শাস্তি দিতে হয় তবে দুজনকেই দেওয়া হোক। কিন্তু তা না করে শুধু পুরুষকেই দোষারপ করা হচ্ছে, শাস্তি দেওয়া হচ্ছে’।

তিনি বলেন, শারীরিক সম্পর্কের পর বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা দেওয়া হচ্ছে। আর যদি বিয়ে করতে চায় তবে ২০ লাখ টাকা দেনমোহর দাবি করছে৷ এতেও যদি পুরুষটি মেনে বিয়ে করেন তবে ১৫ দিন পর ওই নারী বলছে মিল হচ্ছে না আমি তালাক চাই৷ সব দিকেই পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এরজন্য নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করে পুরুষ অধিকার রক্ষায় আইন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা ইমরান হাসান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, বিয়ের নামে তিনি প্রতারণার শিকার হয়ে উল্টো মামলার মুখে পড়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমি বিয়ে করেছিলাম ২০১৮ সালে। পরে আমার স্ত্রী আরেকজনকে বিয়ে করে আমেরিকা চলে যায় এবং সেখান থেকে আমার কাছে দশ লাখ টাকা দাবি করে। এক পর্যায়ে আমি ডিভোর্স দিলে আমার নামে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করে। আমার বাবা, মা ও আমার নামে ওয়ারেন্ট করালো। শেষে খোরপোষের মামলা।'

নাঈম নামে আরেকজন ভুক্তভোগী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, 'আমি বিয়ের পর বিদেশ চলে যাই। আমার স্ত্রী পরকীয়া করে একই গ্রামের আরেকজনের সাথে চলে যায়। আর আমার কাছে দেনমহর দাবী করে। আমি মানা করলে আমাকে নানা ভাবে মানসিক অত্যাচার করে।'

‘বিশ্ব পুরুষ দিবস’ উপলক্ষে ফাউন্ডেশনটি এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে জড়ো হয়ে বেলুন উড়িয়ে পুরুষ দিবসের শুভ উদ্বোধন করে। এরপর সাড়ে ১০ টার দিকে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি ঢাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এছাড়া সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘নারী ও পুরুষের মধ্যে সুষম ও উন্নত সম্পর্ক তৈরিতে করনীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, আমরা বর্তমানে এমন একটি পরিস্থিতে রয়েছি, যেখানে সবাই নারী নির্যাতনের বিষয়ে কথা বলে, তাদের অধিকারের কথা বলে। কিন্তু পুরুষ নির্যাতন নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না। আমাদের সমাজে শুধু নারীই নির্যাতনের শিকার হয় তা নয়, পুরুষও নারীদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কোনো নারী মিথ্যা মামলা (ধর্ষণ, নির্যাতন) করলে পুলিশ অভিযুক্ত পুরুষকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়৷ কিন্তু এসব নারীর নির্যাতনের শিকার হয়ে পুরষদের সর্বস্ব নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, সেটি রোধে কোনো আইন নেই। তবে নির্যাতনের মানসিকতা নারী সমাজে খুব কমই রয়েছে। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে দেশে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলাই করা হচ্ছে। এর প্রতিকার করতেই পুরুষ নির্যাতন দমন আইন প্রয়োজন।

সেমিনিারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. লিটন মিয়া বলেন, ‘যদিও আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে আইন অনুয়ায়ী সবাই সমান। কিন্তু বাস্তবে এর মিল নাই। আমরা কোর্ট-কাচারিতে অনেক সময় দেখি বিভিন্ন মামলায় পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে, কিন্তু তার প্রতিকারের কোনো উপায় নেই। আসলে পুরুষ নির্যাতন দমনের কোনো আইন নেই। বর্তমানে পুরুষ অধিকার রক্ষা ও নির্যাতন দমন আইন করা প্রয়োজন। এটা সময়ের দাবি। এই আইন তৈরি হলে নারী-পুরুষের মধ্যে অনেক বৈষম্য দূর হবে’।

সেমিনারে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক এম রহমান বলেন, ‘নারীবাদ আজ যে জায়গা করে নিয়েছে, সেই নারীবাদ একদিনে জায়গা করে নেয়নি। যে নারীবাদের আক্রমণ আমরা অনুভব করি, তা একদিনে বিলীন করা সম্ভব নয়। তাই পুরুষরা এখন ঝুঁকির মুখে আছে। সবাই কথা বলে সমান অধিকারের। কিন্তু সেটি কি আছে? বর্তমানে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ হচ্ছে, কিন্তু সেখানে কয়জন নারী শ্রমিক কাজ করছে? আমরাও সমান অধিকার চাই। নির্মাণ কাজে সমান নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করুক। কিন্তু সবাই মুখে বলে সমান অধিকার, আর বাস্তবে অগ্রাধিকার। সমাজে সমান অধিকারের নামে গোলামির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আপনি গোলামি মানতে না চাইলে আপনার বউ থাকবে না’।

তিনি বলেন, ‘তাই সমাজে সম-অধিকার বাস্তবায়ন করতে এবং পুরুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এজন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে’।

এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খালেদ মাহমুদ তন্ময় বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেট ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার দুইশত সাতচল্লিশ কোটি টাকা। যেহেতু পুরুষ বিষয়ক মন্ত্রণালয় নেই, সেহেতু  এর পুরোটাই খরচ করা হয়েছে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে’।

তিনি আরো বলেন, ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে, যেখানে পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোন আইনই নেই। নারী নির্যাতন নিয়ে প্রতিবেদনে, জরিপ, গবেষণা, এবং নির্যাতিত নারীকে সহায়তার উদ্দেশ্যে রয়েছে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সংগঠন ও এনজিও। অথচ পুরুষ নির্যাতন নিয়ে গবেষণা, জরিপ, প্রতিবেদন, এবং নির্যাতিত পুরুষদের সহায়তার জন্য পুরুষবিষয়ক কোন মন্ত্রণালয় নেই। নেই কোন এনজিও। পুরুষ নির্যাতন নিয়ে গবেষণা ও প্রতিবেদন না থাকায়, এর মাত্রা এবং ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারছে না জনসাধারণ। ফলে সচেতনতাও তৈরি হচ্ছে না তাদের মাঝে’।

Link copied!