বেটা
অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু অভিনয় করতেন রূপালি পর্দায়। তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সেই রূপালি পর্দার জগতের থ্রিলার কাহিনীকেও হার মানায়। পুলিশ জানাচ্ছে, স্বামী খন্দকার সাখাওয়াত আলীম নোবেল স্ত্রী শিমুকে খুন করে বস্তায় ভরে ফেলে দিয়ে আসেন নির্জন রাস্তার পাশে। পরে স্বামীই প্রথম যান পুলিশের কাছে ডায়েরি করতে। কিন্তু লাশ উদ্ধারের পর এখন সেই স্বামী নোবেলই খুনি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছেন পুলিশ রিমান্ডে।
খুনী হিসেবে সন্দেহ করলেও কোনো সূত্র পাচ্ছিল না পুলিশ। কিন্তু খুব সহজেই পুলিশ জানতে পারে, যে গাড়িতে করে বস্তাভর্তি শিমুর লাশ নেওয়া হয়েছিল সেই গাড়িতে পাওয়া যায় এক বান্ডিল সুতা। এই সুতা আর বস্তার মুখ সেলাইয়ের সুতা একই! এই সুতা থেকেই পুলিশ পেয়ে যায় খুনের সূত্র।
শহরের বাইরে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের পরই শিমুর ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন গিয়ে বোনের লাশ শনাক্তের পর ভগ্নিপতির দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও সুস্পষ্ট প্রমাণ পুলিশ পাচ্ছিল না। তদন্তে নেমেই নোবেলের গাড়িতে সেই সুতা পেয়ে যায় পুলিশ।
এ থেকেই নোবেলের উপর সন্দেহ গাঢ় হয় পুলিশ কর্মকর্তাদের। এরপর তাকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি খুনের স্বীকারোক্তি দেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
ঢাকা জেলা পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সোমবার দুপুরে লাশ উদ্ধারের পর ‘তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে’ শিমুর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। পাশাপাশি অভিনেত্রী শিমুর বাসায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে।
“এ সময়ই বস্তা সেলাই করার সেই সুতার এক বান্ডেল পাওয়া যায শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে। সেই সুতার সূত্র ধরেই পুলিশ মূলত নোবেলকে সন্দেহ করে। গাড়িটি পুলিশ ধোয়া অবস্থায় পায়। তবে এর ভেতর দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছিল।”
সোমবার দুপুরে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর সেতুর কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এটি যে শিমুর লাশ, তখনও তা জানা যায়নি।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী রমজানুল হক বেলেন, লাশটি দুটি বস্তায় ভরা ছিল। একটি চটের বস্তা পায়ের দিক থেকে আরেকটি মাথার দিক থেকে ঢুকিয়ে মাঝ বরাবর প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা।
দুই যুগ আগে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত শিমু মূলত পার্শ্ব অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করতেন। পাশাপাশি কয়েকটি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন। বেশ কিছু নাটক-সিনেমায় প্রযোজনাও করেছেন তিনি। বিবাহিত জীবনে তিনি স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন।
শুটিংয়ের জন্য রবিবার বাসা থেকে বেরিয়ে শিমু আর ফেরেননি উল্লেখ করে সোমবার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন স্বামী নোবেল।
সোমবার লাশ উদ্ধারের পর কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ তা মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে গিয়ে তা শিমুর বলে শনাক্ত করেন তার ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন। মঙ্গলবার দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত করে সলিমুল্লাহ মেডিকের কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে, রশি বা কোনো কিছু দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে।”
লাশ ফেলতে দুবার বেরিয়েছিলেন নোবেল
পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘খুন করে’ লাশ দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় হজরতপুরে ফেলে আসার পরদিন থানায় গিয়ে জিডি করেন নোবেল। ‘দাম্পত্য কলহের জের ধরে’ স্বামী নোবেল হত্যার পর তার বন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদের সহায়তা নিয়ে লাশ গুম করেছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “রোববার সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর বন্ধু ফরহাদকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে নেন। পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা আনেন। শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান।
“প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকায় যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোঁপের ভেতর লাশটি ফেলে চলে যান। পরদিন সোমবার কলাবাগান মডেল থানায় স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন শিমুর স্বামী নোবেল।”
শিমু ও নোবেলের দাম্পত্য কলহ কী নিয়ে ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। শিমুর ভাই খোকন দাবি করছেন, নোবেল ‘মাদকাসক্ত’। নোবেল ও ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
-20241027115010.png)
-20241102183141.jpg)
