৩ কোটি টাকার স্বর্ণসহ সৌদিতে বিমানের কেবিন ক্রু আটক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ২৭, ২০২২, ০৮:০২ পিএম

৩ কোটি টাকার স্বর্ণসহ সৌদিতে বিমানের কেবিন ক্রু আটক

প্রায় ৩ কোটি টাকার সোনা ও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাসহ সৌদি আরবের জেদ্দায় আটক হয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক কেবিন ক্রু। স্খানীয় সময় বুধবার সকালে ফ্লাইটে উঠার আগ মুহুর্তে রুহুল আমিন শুভ নামে ওই কেবিন ক্রু সৌদি আরবের জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন। এরপরই বিমানের ফ্লাইট ঘিরে ঘটা বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

সৌদি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিমানের ঢাকাগামী ফ্লাইট বিজি ৪০৩৬ এর ফ্লাইট স্টুয়ার্ড হিসেবে তার ডিউটি ছিল। বিমানে উঠার আগ মুহুর্তে তারা জানতে পারেন তার লাগেজে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা আছে। এরপর পুলিশ তার ব্যাগ তল্লাশি করে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণ উদ্ধার করে। পুলিশ এসব স্বর্ণের কাগজপত্র দেখতে চাইলে শুভ তা দেখাতে পারেননি। এরপর বিমানের ওই ফ্লাইটটি শুভকে ছাড়া ঢাকার উদ্দেশ্যে জেদ্দা বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

সিভিল এভিয়েশন আইন অনুযায়ী, বিমানের এ ধরনের ফ্লাইটে ১০ জন কেবিন ক্রু বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। কিন্তু শুভ আটক হওয়ায় পাইলট আইন লঙ্ঘন করে ৯ জন ক্রু নিয়ে ঢাকায় আসেন।এ ঘটনায় বিমান কর্তৃপক্ষ শুভকে চাকরিচ্যুত করেছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানা গেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়াললাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে বলেন, রুহুল আমিন শুভর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি এখন আছেন সৌদি ইমিগ্রেশন অথরিটির কাছে। তাদের লগ রিপোর্ট ও অন্যান্য রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে শুভ কী পরিমাণ মুদ্রা বা সোনাসহ ধরা পড়েছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তাহেরা খন্দকার। 

অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে শুভর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ দেশ থেকে শত শত কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে বিদেশ থেকে অবৈধভাবে স্বর্ণ আনতেন। বিমানে যোগদানের পর থেকে এভাবে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। অভিযোগ আছে, বিমানের শিডিউলিং শাখার শাকিল নামের এক কর্মকর্তার হাত ধরে শুভ একটি বাহিনী গড়ে তোলেন বিমানে। এই বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ আনতেন বিমানের ফ্লাইট ব্যবহার করে। শাকিল শিডিউলিং শাখায় যোগদানের পর তিনি মোটা অংকের টাকা নিয়ে এই গ্রুপের সদস্যদের এসব ফ্লাইট ব্যবস্থা করে দিতেন।

জানা গেছে, প্রতি ফ্লাইটে শাকিল ১০ হাজার করে টাকা নিতেন ক্রুদের কাছ থেকে। তিনি নিজেকে বিমানের সাবেক একজন প্রভাবশালী পরিচালকের ভাই পরিচয় দিয়ে শিডিউলিং শাখায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে এর আগে সোনা আমদানি ও টাকা পাচারসহ অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও ওই পরিচালকের কারণে কোনো অভিযোগই কর্তৃপক্ষ আমলে নিত না। যার কারণে তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। শুভ ছাড়াও তার বাহিনীর অপর এক সদস্যের বিরুদ্ধেও বিমান চাকরিচ্যুতিসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে। তার নাম শেহজাদ। তিনিও সম্প্রতি স্বর্ণসহ হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। তবে শাকিলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা- তা জানা যায়নি।

তবে এই ঘটনার পর শুভর গডফাদার শাকিলকে খুঁজছে পুলিশ। শাকিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিশাল আলিশান বাড়ির মালিক। এই বাড়ির কিস্তির টাকাও এই গোল্ড ক্রুরা সরবরাহ করতেন। অভিযোগ উঠেছে, যে ফ্লাইটে রুহুল আমিন শুভ সোনা নিয়ে আটক হয়েছেন ওই ফ্লাইটটিও শাকিল দিয়েছিলেন মোটা অংকের টাকা নিয়ে।

Link copied!