৬০ শতাংশ দক্ষিণ এশীয়র দেহে উচ্চ ঝুঁকির কোভিড জিন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ৭, ২০২১, ০৫:১০ পিএম

৬০ শতাংশ দক্ষিণ এশীয়র দেহে উচ্চ ঝুঁকির কোভিড জিন

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন একটি জিনের সন্ধান পেয়েছেন যা কোভিড সংক্রমণের কারণে ফুসফুস বিকল হওয়া ও মৃত্যুঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ায়। গবেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ এবং ইউরোপীয়দের মধ্যে ১৫ শতাংশের শরীরে এ উচ্চ ঝুঁকির জিন রয়েছে।

দ্য নেচার জেনেটিক্স নামের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ তথ্য প্রকাশ করেন।

সাময়িকীতে গবেষকেরা বলছেন, এ ঝুঁকি কমানোর উপায় হচ্ছে টিকা নেওয়া।

গবেষকরা বলছেন, কোভিডের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য দায়ী জিনটির নাম ‘এলজেডটিএফএল১’ (LZTFL1)। প্রায় ২ শতাংশ আফ্রিকান-ক্যারিবীয় অঞ্চলের মানুষের শরীরে এবং ১.৮ শতাংশ পূর্ব-এশীয় বংশোদ্ভূতদের শরীরে ঝুঁকিপূর্ণ জিনটি রয়েছে।

গবেষক দলের প্রধান জেমস ডেভিস বলছেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ জিনটি সব ধরনের জনগোষ্ঠীর শরীরে সমান অনুপাতে না থাকার বিষয়টি বিজ্ঞানীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, একজন মানুষের ঝুঁকি কম বেশি হওয়ার পেছনে অন্যান্য কারণও থাকে, বিশেষ করে বয়সের বিষয়টি’।

জেমস ডেভিস আরো বলেন, ‘কোনো কোনো জনগোষ্ঠীর জন্য কোভিডের ঝুঁকি বেশি থাকার পেছনে আর্থ-সামাজিক যে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলোরও প্রভাবও থাকতে পারে।’

তার মতে, ‘আমরা চাইলেই বংশগতভাবে পাওয়া জিন বদলে ফেলতে পারব না। কিন্তু, এ গবেষণার ফলাফল এটা প্রমাণ করছে যে, এ জিন যেহেতু একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য বাড়তি ঝুঁকির কারণ, তাই সে জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা নেওয়াটা বিশেষভাবে ফলদায়ক হতে পারে’।

এ জিন যেভাবে ঝুঁকি তৈরি করে?

এ উচ্চ ঝুঁকির জিন যাদের শরীরের রয়েছে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

অক্সফোর্ডের এই গবেষকদের ব্যাখ্যা, ‘ফুসফুসকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে যে আবরণ থাকে তা কোভিড সংক্রমণ হলে ফুসফুসকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কাজ করে। ঝুঁকিপূর্ণ জিনটি সে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া নষ্ট করে দেয়‘।

ফুসফুসের আবরণী কোষগুলো যখন করোনা ভাইরাসের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের গঠন ও কার্যপদ্ধতি বদলে বিশেষ ধরনের কোষে রূপান্তরিত হয় এবং আক্রমণকারী ভাইরাসকে ঠেকাতে উদ্যোগী হয়। করোনা ভাইরাস কোনো কোষের সঙ্গে আটকে থাকার জন্য যে প্রোটিনের ওপর নির্ভর করে, তার নাম ‘এসিই-২’। ফুসফুসের আবরণের কোষগুলো তাদের আচরণ বদলে ফেলে এ প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে এ প্রোটিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।

কিন্তু, যাদের শরীরে ঝুঁকিপূর্ণ LZTFL1 জিন রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া একেবারেই কাজ করে না। ফলে কোভিডের জীবাণু প্রবেশ করলে তাদের ফুসফুসের কোনো সুরক্ষা শরীর দিতে পারে না।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ ধরনের জিনটি ফুসফুসকে বিকল করে দিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তবে, শরীরের অন্য রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এ জিন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা। ফলে টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ালে এ জিন সেটা নষ্ট করতে সক্ষম নয়। কাজেই টিকা কার্যকর থাকে বলে তারা বলছেন।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, জিন সংক্রান্ত এ আবিষ্কারের ফলে সুনির্দিষ্টভাবে ফুসফুস বাঁচানোর জন্য বিশেষ ওষুধ উদ্ভাবনের পথ খুলে যাবে। বর্তমানে করোনার চিকিৎসায় যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা শরীরের পূর্ণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতে কাজ করে।

সূত্র: বিবিসি

Link copied!