মার্চ ১৫, ২০২২, ০৯:২৪ এএম
চলমান সামরিক অভিযানের কারণে একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় এবার বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য রপ্তানি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া।
মঙ্গলবার ১৫ মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত গম, যব, ভুট্টা ও রাইসহ যাবতীয় খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ রাখবে ক্রেমলিন। গতকাল সোমবার রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। খবর রয়টার্সের।
রুশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, ‘কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে একটি সরকারি ডিক্রির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চ থেকে ৩০ জুন পযন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো খাদ্যশস্য রপ্তানি করা হবে না। খুব শিগগিরিই এই ডিক্রি কার্যকর করা হবে।’
রাশিয়া হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ গম উৎপাদনকারী দেশ। পুতিন সরকারের এই সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়া মাত্রই ইউরোপে বাড়তে শুরু করেছে গমের দাম।
প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ফ্রন্ট-মান্থ মের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে এর মধ্যেই প্রতি টন গমের দাম বেড়েছে এক দশমিক ৮ শতাংশ।
ইউরোপের এক খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী এ বিষয়ে রয়টার্সকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা ও মহামারির কারণে এমনিতেই গত বছর বিশ্বজুড়ে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, ফলে বাজারে খাদ্যশস্যের দাম চড়া। এখন রাশিয়া যদি সত্যিই এমন সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে বাজারের চেহারা বদলে যাবে।’
‘আমরা আশা করছি—রপ্তানি বিষয়ক পুরনো যে চুক্তিগুলো আছে, সেসব সচল রাখবে রাশিয়া। যদি তা না রাখে, সেক্ষেত্রে বিশাল বিপর্যয় ঘটবে।’
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, ইউক্রেনে রুশ অভিযানকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেসবের জবাব দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
তবে অনেকে বলছেন, অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে রুশ সরকার। এক্ষেত্রে উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, গত সপ্তাহে সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোতে খাদ্যশস্য রপ্তানি স্থগিত করেছে রুশ সরকার।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের ২০ তম দিন মঙ্গলবার রাজধানী কিয়েভের আশপাশের শহরে ব্যাপক গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী।
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশটির দুই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং রাশিয়ার ১২ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।
তবে ইউক্রেনের ওই দাবি উড়িয়ে দিয়ে রাশিয়া বলছে যুদ্ধে তাদের ৪৯৮ সৈন্য নিহত এবং ২ হাজার ৮৭০ জনের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, রুশ হামলায় এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ৩৬৪ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এই সংখ্যার চেয়ে অনেকে বেশি বলে মনে করছে সংস্থাটি।