হেলেনা জাহাঙ্গীর নয়, ফ্যাক্টর পেছনের শক্তি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ৩১, ২০২১, ০৫:২২ পিএম

হেলেনা জাহাঙ্গীর নয়, ফ্যাক্টর পেছনের শক্তি

আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু বিক্রয় বা ইজারা নেওয়ার বিষয় নয়। পাওয়ার হাউসের চারপাশে সবসময় সুবিধাবাদী, অপরাধী, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি রয়েছে। কমিশন, শতাংশ, পিডি, দালালি, ক্লাব সংস্কৃতি —এসব শিকড় গেড়েছে। যেহেতু দলটি একে একে তিনবার ক্ষমতায় রয়েছে, এ কারণে দলে অনুপ্রবেশও একটি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক আলোচনা, আমাদের জাতির রঙিন ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা বা আলোচনা গৌণ হয়ে যাচ্ছে। এর বিস্তার এবং কভারেজ সাধারণ জনগণের কাছে এ কারণেই পৌঁছাচ্ছে না।

কিছু নেতাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলেও মনে হচ্ছে। দলীয় মতাদর্শকে ব্যক্তিগত পদক্ষেপের দ্বারা অসম্মানিত করা হচ্ছে। এই অশুভ কাজগুলি আমাদের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে।

কিন্তু মোস্তাক, ফারুক, ডালিম গোলাম আজমের অশুভ আত্মারা চারপাশে ঘুরছেই। আমাদের মধ্যেও শত্রু আছে। গত কয়েক বছর ধরে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, কারা সেই লোক, দল এবং বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করে নিজেদের আখের গোছাতে চায়। সাহেদ, পাপিয়া বা হেলেনা জাহাঙ্গীর রাজনৈতিক পরজীবী। কিন্তু কিছু আওয়ামী লীগার তাদের দলে টেনে নিয়ে আসে এবং তাদের সুরক্ষাও দেয়। সাপ আওয়ামী লীগের ভেতরেও আছে।

আওয়ামী লীগ নেতা আহমেদ হোসেন বলেন, আমি ১৪ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিতে ছিলাম; এবং চার মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, কিন্তু হেলেনাকে কখনও আমাদের রাজনীতির অংশ হতে দেখিনি। তিনি দলের সকল নেতার আত্মমূল্যায়নেরও আহ্বান জানান (সূত্র: ৭১ টিভি, ৩০ জুলাই)। জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাই যথার্থই বলেছেন, যারা এই পরজীবীদের দলে আনতে সহায়তা করছে, তাদের শাস্তি দেওয়া দরকার। তিনি আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগে যোগ্য ব্যক্তিদের খরা নেই। মন্দ লোকেরা অন্য উদ্দেশ্যে এসব করছে।

রাজনীতি এখন টেলিভিশনমুখী। তারা টিভি চ্যানেলে বড় বড় কথা বলে, চামচের রাজনীতি প্রদর্শন করে, ক্ষমতাসীন দলের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে— এসব দেখে মনে হয়, তারা বঙ্গবন্ধুর চেয়েও বেশি আওয়ামী লীগার। কখনও কখনও আমার মনে হয়, বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ আওয়ামী রাজনীতির সদস্য। পরিসংখ্যানগতভাবে এটা যদিও সম্ভব নয়। সেলুকাস! কি আশ্চর্য। পার্টিকে সমুদ্রের তলদেশে টেনে নিয়ে যাওয়াই কিন্তু তাদের আন্ডারলাইন এজেন্ডা।

যে দল তার লক্ষ লক্ষ অনুসারীদের রক্ত এবং শক্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে, সে দল কখনও ব্যর্থ হবে না। আমাদের আসল ছেলে-মেয়েদের ফিরিয়ে আনতে হবে— তারা দল থেকে অনেক দূরে ছিটকে গেছে। কিন্তু তারা খাঁটি সোনা, খাঁটি হীরা, আসল জহরত। এই কাজটি প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর করা উচিত, দলের অন্য কোনও নেতা এটি করতে পারবেন না।

এটা ২০২১, ১৯৭৫ নয়। কান এবং চোখ সর্বত্রই সজাগ আছে। রাজনীতিতে 'কোনও ক্ষমা'র অধ্যায় থাকা উচিত নয়। এখন সময় এসেছে পার্টি স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ার সাথে এগিয়ে যাওয়ার; রাজনৈতিক পটভূমি, গুণমান এবং দলীয় আনুগত্য মূল নির্ধারণকারী ফ্যাক্টর হওয়া উচিত। রাজনৈতিক ব্যবসা বন্ধ করুন। হেলেনা জাহাঙ্গীর কোন ফ্যাক্টর নয়, কিন্তু ফ্যাক্টর হল তার পেছনের অশুভ শক্তি।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশম্যাটিক রাষ্ট্রনীতি কেবল একটি অনুন্নত দেশকে এশিয়ার উদীয়মান নক্ষত্রেই রূপান্তরিত করেনি, এটি ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে জাতিকে সহায়তা করেছে। স্বাস্থ্য, আয়ু, জন্মহার এবং নারীদের কর্মসংস্থানসহ অনেক সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ভারত এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের তুলনায় ভাল স্কোর করছে।  ক্রমাগত এভাবে উন্নয়ন করা স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে শত্রুও তৈরি করে। রাজনীতি এখন সীমানাছাড়িয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক স্বার্থগোষ্ঠীগুলো জাতির অগ্রগতি দেখছে এবং তাদের "মোস্তাক" স্থানীয় এজেন্টের সাথে যুক্ত যে হবে, সেটা বলেই দেওয়া যায়।

আমাদের এমনটা বন্ধ করতে হবে। দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষত মেরামত করা দরকার। কিছুই ব্যক্তিগত নয়। সবই দলীয়। কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আল্লাহ আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করুন। প্রধানমন্ত্রী এই সংকটগুলি সমাধান করবেন। দল সবার উপরে। আর তার উপরে আমাদের মাতৃভূমি বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্নের দেশ।

ডা. তারেক মাহমুদ হোসেন, সাবেক জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক কর্মকর্তা; প্রাক্তন ভিপি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ; সভাপতি বিসিএল, এমএমসি।

Link copied!