দুবাইয়ের কথিব জুয়েলারি ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে নিয়ে জোর আলোচনা চলছে এখন। বাংলাদেশে একজন পুলিশ কর্মকর্তার হত্যা মামলার পলাতক এই আসামির ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন পোস্ট এখন আলোচনার কেন্দ্রে। তার অ্যাকাউন্টে এখন ৪ লাখ ২০ হাজারের বেশি ফলোয়ার। এটি ক্রমশ বাড়ছে। অনেকে তার ফেসবুক পোস্টগুলো যাচাই-বাছাইও করেছেন। এতে দেখা গেছে, আরাভের পোস্ট করা বেশকিছু ছবি ফটোশপে এডিট করা। তথ্যও বিভিন্ন সময় পাল্টে ফেলছেন তিনি।
২০২০ সালের ৯ এপ্রিল খোলা এই ফেসবুক প্রোফাইলের নাম ছিল আপন আরাভ। পের নাম পাল্টে করা হয় আরাভ খান। আরাভের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেই তার ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার নানা রকমের তথ্য-উপাত্তও আছে। একই সাথে প্রচুর ছবিও তিনি পোস্ট করেছেন।
তার পোস্ট করা ফটোশপে এডিট করা একটি ছবিতে দেখা গেছে, তিনি লন্ডন ব্রিজের সামনে। প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের সামনেও তার একই রকমের আরেকটি ছবি পাওয়া গেছে।
শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা স্থানে তোলা নিজের ছবি তিনি শেয়ার করেছেন ফেসবুকে। সেগুলোর মধ্যে বেশকিছু ছবি এডিট করে পোস্ট করা হয়েছে। যেমন: একটি প্রাইভেট প্লেনে তার একটি ছবি কিংবা সুইজারল্যান্ডের আরেকটি ছবি এর মধ্যে রয়েছে।
২০২০ সালের ২৭ ও ২৯ আগস্ট তিনি নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ছিলেন দাবি করে ২টি ছবি পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু পরে জানা যায়, এগুলো আসলে ভারতের গোয়ার পাঞ্জিমের কোকো বিচ এবং আঞ্জুম বিচে তোলা হয়েছিল।
২০২১ সালের ২৫ মে গায়ক নোবেলের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে যান রবিউল। নোবেলও গোপালগঞ্জের বাসিন্দা। পরে রবিউল দাবি করেন, তিনি নোবেলকে নিয়ে একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করছেন।
ফেসবুকে রবিউল দাবি করেন, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তবে পুলিশ বলেছ, রবিউল এসএসসি পরীক্ষাও পাস করতে পারেননি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে, সোহাগ মোল্লা, আপন ও হৃদয় নাম ব্যবহারকারী রবিউলের ২০০৯ সালে খোলা আরেকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেটির নাম 'শেখ হৃদি'।
দুবাইতে নিজের জুয়েলারি দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে আমন্ত্রণ জানান রবিউল। এর পরেই ২০১৮ সালে যে তিনি এক পুলিশ পরিদর্শককে হত্যা করেন, বিষয়টি আলোচনায় আসে। হত্যার পরপরই রবিউল ভারতে পালিয়ে যান এবং নাম-পরিচয় পাল্টে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট করেন। এখন তিনি দুবাইতে বসবাস করছেন।
রবিউল থেকে আরাভ খান
২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে রবিউল লিখেন, তিনি দুবাইতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন।
তিনি বুর্জ খলিফা, এক্সপো ২০২০ দুবাই ও ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর ডেজার্ট সাফারিসহ দুবাইয়ের বিভিন্ন স্থানের ছবি ও ভিডিও আপলোড করেছেন। গত বছরের ২২ অক্টোবর পদ্মা সেতুর সামনে একটি ছবি শেয়ার করেছিলেন তিনি। আরেকটি পোস্টে রবিউল তাকে 'টাইমস অব বাংলাদেশ'র চেয়ারম্যান করায় তার বন্ধুদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ওই বছরের ৮ জানুয়ারি রবিউল জানান, তিনি দুবাইতে ৫টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি রবিউল শেয়ার করেছেন, তিনি শেনজেন ভিসা পেয়েছেন, যা ইইউভুক্ত দেশগুলোর জন্য একক ভিসা। গত বছরের ১৬ ও ১৭ মার্চ তিনি পদ্মা নদী ও কক্সবাজারের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন।
একই বছরের ১৬ জুন রবিউল একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেটি গোপালগঞ্জের বলে দাবি করেন। কিন্তু ভিডিওতে থাকা একটি অটোরিকশা দেখে বোঝা যায়, জায়গাটি ভারতের। অর্থাৎ এটিও কারসাজি করা।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি রবিউল জানান, তিনি দুবাইয়ে আরাভ ডায়মন্ড ও গোল্ড জুয়েলার্সের মালিক। এর ৩ দিন পরে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফার ৬৫তম তলায় তার নতুন কেনা ফ্ল্যাটের ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করেছেন।
রবিউলের ফেসবুক পেজে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ৬০ ভরি স্বর্ণ দিয়ে তার দোকানের জন্য একটি বাজপাখির ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। গণমাধ্যমে ওই বাজপাখির খবর ছড়িয়ে পড়ে।
৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ভারতের কোনো এক জায়গায় একটি বিএমডব্লিউ মোটরবাইকে চড়ে ভিডিও পোস্ট করেছেন।
তবে অতিসম্প্রতি তিনি আলোচনায় আসেন যখন কয়েকদিন আগে তিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন, যেখানে সাকিব আল হাসান বলেছেন, তিনি ১৫ মার্চ দুবাইতে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন।
ওই পেজ থেকে আরও কিছু তারকার একই ধরনের ভিডিও শেয়ার করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, সাকিব আল হাসান একটি বিলাসবহুল গাড়িতে করে রবিউলের সঙ্গে ওই জুয়েলারি দোকানে যান।
বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে সাকিবকে ধন্যবাদ জানান রবিউল। এ ছাড়া তিনি তার দুবাই আসার নেপথ্য গল্পও বলেন। তিনি দাবি করেন, পুলিশ হত্যায় জড়িত নন। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।