এপ্রিল ২১, ২০২৩, ১২:০১ এএম
রাজধানী ঢাকার রাস্তায় ছুটছে শত শত বাইক। এরা সবাই কি নিজের পথচলার বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে বাইক? কিংবা শখ করে? এর উত্তর-না। এদের মধ্যে বর্তমানে প্রতি ১০০ জনের ৯০ জন বা তারও বেশি রাইড শেয়ার করে আয় করছেন। কেউ কেউ পরিবারের জন্য, কেউ নিজের জন্য। হ্যাঁ! কেউ ফুলটাইম আবার কেউ কেউ পার্টটাইম।
দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের একাধিক টিম রাজধানীর বাংলামটর ও মগবাজারসহ কয়েকটি স্থানে এই বাইকারদের সাথে কথা বলতে চেষ্টা করেন।
একটা অবিশ্বাস্য বাস্তবতা হলো, এদের অধিকাংশই চেহারা দেখাতে বা ক্যামেরার সামনে ইন্টারভিউ দিতে চাননি। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেছেন, তারা চান না যে তাদের পরিবার বা বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন বা গ্রামে কিংবা শহরে নিজের আবাসন এলাকার কেউ জানুক যে তারা বাইকে রাইড শেয়ার করে উপার্জন করছেন।
এসব বাইকাররা সোশ্যাল স্টিগমা বা অদৃশ্য সামাজিক সংস্কার বা বিরাজিত দৃ্ষ্টিভঙ্গি কে ভয় পান। কারণ হিসেবে বলেন, সমাজের লোক এ কাজ কে সম্মান করে না। বন্ধু বান্ধব ছোট করে দেখে। পরিবার এ পেশা কে পরিচয় দিতে পছন্দ করে না। আর আত্মীয় স্বজন একেকজন একেকভাবে দেখে বা পরিচয় প্রকাশে দ্বিধা বা সংকোচ বোধ করে।
কিন্ত নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো- এই বাইকে বাণিজ্যিকভাবে রাইড শেয়ার করে জীবিকা অর্জনে নেমেছে লাখো ব্যাক্তি। যুবক থেকে শুরু করে আছে বয়োবৃদ্ধ পুরুষও।
যাত্রীরা কেমন বাইক, বাইকার ও হেলমেট চায়? জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাইকার বলেন, যাত্রীরা সব সময় একজন বাইকারকে পরিচ্ছন্ন দেখতে চায়। একই সাথে বাইক ও হেলমেটও ।
পদ্মা সেতুতে বাইক চলতে পারবে - এ খবরে উচ্ছ্বসিত বাইকাররা বলেন, “ সরকার প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে। সড়কে দুর্ঘটনা রোধ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে সেতুর নিরাপত্তা রাক্ষায় নিয়ম কানুন জারি করলে আমরা তা মানতে রাজি আছি।”
কতজন এ পেশায়?
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর হিসেব অনুযায়ী মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত দেশে মোট ৪০ লাখ ৯০ হাজার ১৪৩ মোটর সাইকেল নিবন্ধিত। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরীতে ১০ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৫ টি।
করোনার সংক্রমনের পর দেশে নতুন মোটর সাইকেল যুক্ত হয়েছে ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৬ টি। এর আগে এ সংখ্যা ছিলো ২৮ লাখ ১৪ হাজার ৬৩৭ টি।
ঢাকায় করোনার পর ২০২০ থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত নতুন মোটর সাইকেল যোগ হয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৯৮০ টি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ঢাকায় ছিলো ৭ লাখ ১৬ হাজার ৬৪৫ টি। গত তিন বছরে দেশে মোটর সাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে ২০১৯ সালের মোট হিসাবের ৩০ শতাংশের বেশি।
কিভাবে শুরু?
বাংলাদেশে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা হিসেবে উবার যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালে। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি দেশে প্রথম চালু হয়।
এতে নিবন্ধিত হয়ে মোটর বাইকারদের অনেকে বিকল্প কর্মসংস্থান খুঁজে পায়৷ কিন্ত আ্যাপ এ ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এ বিলম্ব ও অন্যান্য জটিলতার কারনে আ্যাপ বন্ধ রেখে যাত্রীদের সাথে সরাসরি কন্টাক্ট করে বাইকার রা সার্ভিস দিতে শুরু করে। চাহিদা থাকায় ক্রমেই এ দলে যোগ দেয় পুরনো ও নতুন বাইকাররা।
অ্যাপ ছেড়ে ‘খ্যাপে’ কেন বাইকাররা
ভাড়ার ২৫ ভাগ আ্যাপস মালিককে দিতে হয়। ফুয়েল এর দাম বৃদ্ধির পরও উবার কর্তৃপক্ষ কমিশন না কমানোয় বাইকাররা পর্যায়ক্রমে ফ্রিল্যান্স রাইড শেয়ারিং শুরু করে।
এদিকে প্রায় প্রতিদিন বাইক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে যাত্রী ও বাইকারসহ অনেক তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। তবুও চলছে জীবিকার তাগিদে বাইকে রাইড শেয়ারিং। কারন এরা কর্মহীন। চাকুরী হারিয়েছেন বা চাকুরির চেষ্টা বারবার করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
কতো আয় হয়?
নাম প্রকাশে অনচিছুক এই মোটরসাইকেল বাইকার জানালেন, তিনি সারাদিন এ কাজ করেন এবং তার টার্গেট প্রতিদিন খাওয়া খরচ ও ফুয়েল ব্যয় বাদে এক হাজার টাকা আয় করা।
আরেকজন জানান, তিনি একটি ফুলটাইম জব করেন এবং অফিস থেকে বের হয়ে ২-৪ ঘন্টা রাইড শেয়ার করেন। এতে তার ৫শ থেকে ৭শ টাকা আয় হয়।
জানা যায়, রেজিস্ট্রিকৃত বাইকের সংখ্যার চাইতেও বেশী বাইকার এখন ঢাকায় রাইড শেয়ার করেন। তারা নিজ জেলায় রেজিষ্ট্রেশন নিয়েছেন এবং ঢাকায় এসে রাইড শেয়ার করছেন। থাকছেন মেসে বা আত্মীয় স্বজনের বাসায়। লক্ষ্য একটাই। বেকার বসে না থেকে আয় রোজগারের চেষ্টা করা।