কোটা বাতিলের দাবিতে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। দাবি উঠেছে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিলের। নিয়োগে অসমতার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে ছাত্রসমাজ। নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, মাহিন সরকার, হান্নান মাসউদ, সোহাগ মিয়া, আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, রিফাত রশিদ, নুসরাত তাবাসসুম, রাফিয়া রেহনুমা হৃদি, উমামা ফাতেমাসহ আরও অনেকেই কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, তাদের কেউ কেউ ভিপি নূরের সমর্থক।
২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনে বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন নুরুল হক নুর ওরফে ভিপি নুর। তার হাতেই প্রথমে ছাত্র অধিকার পরিষদ ও পরবর্তীতে গণ অধিকার পরিষদ গঠিত হয়। গত বছরের শুরু থেকে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। নুরের সমর্থকগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি।
এই আন্দোলনের পক্ষে যুক্তি যেমন উঠেছে, তেমনই বিপক্ষে সরকার সমর্থকদের সমালোচনাও কম হচ্ছে না। আজ দুপুরেই কোটা আন্দোলনকে ‘রাজনৈতিক রূপ’ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাধারণ ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, আন্দোলনকারীরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আন্দোলনকারীরা লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন।
গত বছরের শুরু থেকে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের মদভেদ দেখা দিলে দল দুই ভাগ হয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নুরের অনুসারী হিসেবে পরিচিতদের একটি অংশ ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ গড়ে তোলেন। নাহিদ ইসলাম এই সংগঠনের সদস্য সচিব।
সংগঠনের একাধিক নেতা জানান, শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, পরিসর ও সংস্কৃতি নির্মাণ, শিক্ষার্থী কল্যাণ, ছাত্র-নাগরিক রাজনীতি নির্মাণ ও রাষ্ট্র-রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে গত বছরের ৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সামনে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ আত্মপ্রকাশ করে। ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাহিদ ইসলামকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি করেছিল সংগঠনটি। প্রসঙ্গত, নাহিদ ইসলাম বিগত ডাকসু নির্বাচনে নুরুল হক নুরের প্যানেল থেকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন।
আসিফ মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ হতে মাস্টার্স শেষ করেছেন। তিনি ২০১৭-২০১৮ সেশানের শিক্ষার্থী। আসিফ মাহমুদ বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আসিফ মাহমুদ ছাত্রজীবনে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে অনেক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন, ২০১৯ সালে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় সাত দিনের জন্য তালাবদ্ধ করে রাখেন।
রাজনৈতিকভাবে প্রথমে ছাত্র অধিকার পরিষদের অংশ হিসেবে কিছু সময়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
এরপর সেখানে থেকে পদত্যাগ করার পরে নিজে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ গঠন করে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের কাজ করতে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
২০১৬-২০১৭ সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ মাস্টার্স শেষ করে নিচ্ছেন সরকারি চাকুরির প্রস্তুতি। ছাত্রজীবনে তিনি বিভিন্ন ধরণের যৌক্তিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করেছেন। ছাত্রজীবনে বিজয় একাত্তর হল ডিবেটিং ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের অনিয়মের বিরুদ্ধে সাড়া জাগানো আন্দোলন করেছেন তিনি।
আরেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বাংলা বিভাগের ছাত্র। তিনিও ছাত্রশক্তির সঙ্গে যুক্ত।
সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ ইংলিশ ফর স্পিকার্স অব আদার ল্যাংগুয়েজেস বিভাগের ছাত্র। তিনি ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব।
সমন্বয়ক সোহাগ মিয়া ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র। তিনিও ছাত্রশক্তির সঙ্গে যুক্ত। সমন্বয়ক আব্দুল কাদের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র। তিনি ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক।
সহ-সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন গণিত বিভাগের ছাত্র। তিনি ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য।
সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশিদ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ও সহ-সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তারা দুজনও ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল শাখার সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম সদস্য সচিব।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সমন্বয়ক রাফিয়া রেহনুমা হৃদি ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১ নম্বর যুগ্ম সদস্য সচিব।
সুফিয়া কামাল হল শাখার সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। তিনি অবশ্য ছাত্র ফেডারেশনের নেত্রী। তিনি সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব।