দেশের ৫ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সিলেট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, পঞ্চগড় ও উখিয়ায় নদনদীর পানি বাড়ছেই। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জুলাই জুড়েই ভারী বৃষ্টি চলতে থাকবে সিলেটে। এছাড়া অন্যান্য জেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জামালপুরে ২৫টি ও কুড়িগ্রামে ৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদনদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল, চরাঞ্চল ও উপকূলবাসী চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সিলেটে দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বন্যা, জুলাই জুড়েই চলবে বৃষ্টি
সিলেটের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, আবার কোথাও কোথাও সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার কমার সঙ্গে সঙ্গে অন্য পয়েন্টে বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সকাল নয়টা পর্যন্ত সুরমা-কুশিয়ারার সবগুলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। সূত্র জানায়, উজানের উপজেলা থেকে পানি নামতে থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এ-অবস্থায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার সাড়ে ৬ লাখ বাসিন্দা। এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি কিছুটা কমে এলেও নদী ও হাওরগুলোতে পানি ক্রমশ বাড়ছে।
গতকাল বুধবার জুলাই জুড়েই সিলেট বিভাগে বৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি বেশি হওয়ার পূর্বাভাস আগে থেকেই দেওয়া হয়েছিল। এর আগে জুনে বেশ ভালোই বৃষ্টি হয়েছে। জুলাইয়ের প্রায় পুরো সময়জুড়ে সারাদেশে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি চলতে পারে। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে জুলাইয়ের পুরোটাজুড়েই বৃষ্টি ও বন্যা এবং এ-কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে বিভাগ ও জেলাবাসীর ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সবশেষ খবর অনুযায়ী তৃতীয় দফায় বন্যায় সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় ৯৭টি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৮৪টি গ্রামের ৭ লাখ ১১ হাজার ২২৬ জন বন্যার কবলে পড়েছেন। এছাড়া জেলার ৬৫৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৪০৭ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রথম বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এ-অবস্থা প্রশমিত হয় ৮ জুনের পর থেকে। তবে সেদিন উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার কবলে পড়ে সীমান্তের দুটি উপজেলা এবং এর প্রভাবে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকাসহ ১৩টি এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। এরপর ১৭ জুন সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ১৯ জুন ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ফলের কারণে এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এরপর ২৫ জুন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়।
জামালপুরে পানি বাড়ায় ২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইতে থাকায় ২৫টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে প্রবাহিত হওয়ার খবর আসে। যমুনার পানি দ্রুতগতিতে বাড়ায় সড়ক ভেঙে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা ও ইসলামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্র জানায়, ইসলামপুর উপজেলার ১১টি প্রাথমিক ও ১২টি মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া মেলান্দহে দুটি প্রাথমিক স্কুল বন্ধ রয়েছে। দেওয়ানগঞ্জের ১৫টি প্রাথমিক স্কুলের মাঠে পানি ঢুকেছে। পানি আরেকটু বাড়লে এসব স্কুল বন্ধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
পঞ্চগড় সদরে বন্যা, হাঁটুপানিতে বিড়ম্বনা
ভারী বৃষ্টির কারণে পঞ্চগড় সদরের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পূর্বজালাশী এলাকার হঠাৎপাড়া গ্রামে হাঁটুপানি থাকায় বিড়ম্ব্নার সম্মুখীন হয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। বন্যার কারণে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ও কালভার্ট ভেঙে পড়েছে। সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া-দেওয়ানহাট সড়কের বলেয়াপাড়া এলাকায় একটি সড়ক ভেঙে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জেলা শহরে যেতে কয়েক কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে।
এক মাস ধরে বন্যার কারণে স্কুল ও কলেজে যেতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ উঠেছে, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ-অবস্থা দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রামে পানিবন্দী ২৫ হাজার পরিবার, ৮৬টি প্রাথমিক স্কুল বন্ধ
কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন এসব নদনদী অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলবাসী ২৫ হাজার পরিবার। পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রয়েছে ৮৬টি প্রাথমিক স্কুল। এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় থাকা ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু স্থানে। চরাঞ্চলের ঘরবাড়িসহ নিম্নাঞ্চলের কাঁচা-পাকা সড়ক ডুবে যাওয়ার কারণে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
উখিয়ায় পানিবন্দী ৩ হাজার পরিবার
ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজারের উখিয়ার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের অন্তত ৫০ হাজার সদস্য পানিবন্দি হয়েছে। প্লাবিত হওয়া এসব গ্রাম হলো- জালিয়া পালং ইউনিয়নের নম্বরী পাড়া, ঘাটঘর পাড়া, পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবুনিয়া, খেওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলাল পাড়া, মনির মার্কেট, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজির কুল, রত্না পালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা, পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকার পাড়া, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।