ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪, ০৪:৫৯ এএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের মামলার অন্যতম আসামি মামুনুর রশীদ ওরফে মামুনসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব বলছে, একই এলাকায় থাকার কারণে ভুক্তভোগী তরুণীর স্বামীর সঙ্গে ৩ থেকে ৪ বছর আগে মামুনের পরিচয় হয়। ওই তরুণীর স্বামীকে দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন মামুন।
মামলার প্রধান আসামি মোস্তাফিজসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করার পর মামুন ও মুরাদকে গ্রেপ্তার করা হয় বুধবার রাতে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, পোশাক কারখানায় চাকরি করার সময় মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়েন মামুন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার সখ্য তৈরি হয়। কারখানার চাকরি ছেড়ে ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি মাদক ব্যবসায়ী বনে যান।
“সে কক্সাবাজারের টেকনাফ থেকে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু মাদকসেবি শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করত। এভাবেই মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থীর সাথে তার সখ্য তৈরি হয়। মাঝে মাঝে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে গিয়ে সে রাত্রিযাপন করত এবং অন্যদের সাথে মাদক সেবন করত।”
র্যাব বলছে, একই এলাকায় থাকার কারণে ভুক্তভোগী তরুণীর স্বামীর সঙ্গে ৩ থেকে ৪ বছর আগে মামুনের পরিচয় হয়। ওই তরুণীর স্বামীকে দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন মামুন।
কিছুদিন আগে মামুনের থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যা হলে ওই তরুণীর স্বামীকে ফোন করে তিনি জানান, কিছুদিন তাদের বাসায় থাকবেন। এরপর তাদের ভাড়া বাসায় প্রায় চার মাস সাবলেট থাকেন মামুন।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “মোস্তাফিজুর ঘটনার আগে মামুনের কাছে অনৈতিক কাজের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন ৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই হলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে, সে এখন থেকে হলে থাকবে। মোস্তাফিজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ওই তরুণীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখা করতে বলে মামুন।
“সে অনুযায়ী সেদিন সন্ধ্যার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে যান মেয়েটির স্বামী। মামুন সেখানে তাকে মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর তাকে বলে, সে যেন তার স্ত্রীকে ফোন করে মামুনের ব্যবহৃত কাপড়গুলো নিয়ে একটি ব্যাগে ভরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে দিয়ে যায়।”
র্যাব বলছে, স্বামীর কথায় রাত ৯টার দিকে মামুনের ব্যবহৃত পোশাক ব্যাগে ভরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে যান ওই তরুণী। মামুন ও মোস্তাফিজ ওই ব্যাগ মেয়েটির স্বামীর হাতে দিয়ে ৩১৭ নম্বর রুমে রেখে আসতে বলে। মেয়েটির স্বামী ওই রুমে গেলে মুরাদ তাকে আটকে রাখেন। আর মামুন ও মোস্তাফিজ মেয়েটিকে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে ‘পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ’ করে।
মঈন বলেন, “তারা ওই ভুক্তভোগীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেন, পরে হলের কক্ষে ফিরে তার স্বামীকেও বাসায় চলে যেতে বলেন।”
ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হওয়ার পরদিনই প্রধান আসামি মোস্তাফিজুর রহমানকে সাভার থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গ্রেপ্তার হন সাব্বির হাসান, সাগর সিদ্দিকী এবং হাসানুজ্জামান। তাদেরকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
মোস্তাফিজুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। ধর্ষণের ঘটনায় তাকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।