আগস্ট ৫, ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই রমজান শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশের ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘোষণা দেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এ ভাষণটি রাত ৮টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ এবং বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচারিত হয়। ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নির্বাচন কমিশনকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হবে যেন তারা রমজানের আগেই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে।
এর আগে বিকেলে তিনি জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দাঁড়িয়ে "জুলাই ঘোষণা" পাঠ করেন।
ভাষণে ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি প্রধান দায়িত্ব হলো—সংস্কার, বিচার এবং একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন। তিনি বলেন, "এবার আমাদের যাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চূড়ান্ত অধ্যায়ে প্রবেশ করছি—একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া। আজ থেকেই আমরা সেই অধ্যায়ে পা রাখছি।"
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তিন দিনের মাথায় অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকেই বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল।
রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে যৌথভাবে জানানো হয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এবার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে সেই সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “নির্বাচন ফেব্রুয়ারির শুরুতেই আয়োজন করা হবে, যাতে রমজানের আগেই তা সম্পন্ন করা যায়।”
তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান, সবাই যেন এই নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রার্থনা করেন। এ নির্বাচনকে “নতুন বাংলাদেশের” পথে সম্মিলিত পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
তিনি বলেন, “এই নির্বাচন যেন উৎসবের আমেজ, শান্তি-শৃঙ্খলা, ভোটার উপস্থিতি এবং জাতীয় ঐক্যের দিক থেকে দেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে ওঠে—সে লক্ষ্যে আজ থেকেই মানসিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।”
ভোটাধিকার থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “১৫ বছর ধরে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এবার আমরা শুধু আনন্দ নয়, জমে থাকা আনন্দ নিয়ে ভোট দিতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে এমন অনেক ভোটার থাকবেন যারা জীবনে প্রথমবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। আবার অনেকে অনেক বছর আগে ভোটার হলেও কখনো ভোট দিতে পারেননি—তাদের জন্যও এই নির্বাচন হবে এক বিশেষ উপলক্ষ।
নির্বাচনের দিনকে ঈদের আনন্দের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, “চলুন, এ দিনটিকে আমরা ঈদের মতো উদযাপন করি। সবাই সন্তানদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং এ দিনটিকে জীবনের এক আনন্দময় স্মৃতি করে তুলবেন।”