দর্শনার্থীর সংখ্যায় রেকর্ড গড়ল মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। ঈদের দ্বিতীয় দিন জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেছিলেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। এতটাই ভীড় ছিল যে, ঘুরতে এসে দর্শনার্থীদের ভিড়ের মধ্যে হারিয়েছিল ৬৫-৭০ জন শিশু-কিশোর। তাদের প্রত্যেকেই অবশ্য পরে খুঁজে পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা তথ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়ালিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, চিড়িয়াখানায় ঈদের দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। যা আশা করেছিলাম তার চেয়েও অনেক বেশি দর্শনার্থী এসেছে।
জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর (ভারপ্রাপ্ত পরিচালক) মো. মজিবুর রহমান বলেন, আজকে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার দর্শনার্থী এসেছে চিড়িয়াখানায়। এদের মধ্যে থেকে অনেক শিশু-কিশোর হারিয়ে গেলে তাদের প্রত্যেককেই খুঁজে পাওয়া গেছে। আমাদের চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সবাই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে বলে হারিয়ে যাওয়া শিশু ও কিশোরকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
এর আগে, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসে হারিয়ে গিয়েছিল ৪০ শিশু।
ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন খুদেজা বানু। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায়। তিনি এবার ঈদে গ্রামে যাননি। তাই গ্রাম থেকে বাবা, মা ও দুই ভাই ঢাকায় এসেছেন তাঁর সাথে ঈদ করতে। তাঁদের নিয়ে ঈদের দ্বিতীয় দিন বুধবার জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসেন খুদেজা বানু। তিনি বলেন, ‘আম্মা কোনো দিন চিড়িয়াখানা দেখে নাই। বাঘের খাঁচার সামনে যাইতে ভয় পাইতাছিল।’
খুদেজা বানুদের মতো বুধবার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় এক লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটে। ব্যাপকসংখ্যক মানুষ চিড়িয়াখানায় আসায় শিশুসহ ৭০ জন তাঁদের সঙ্গীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সবাইকে খুঁজে পাওয়া গেছে।
কিউরেটর বলেন, এক লাখের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। চিড়িয়াখানায় স্মরণকালের রেকর্ডসংখ্যক মানুষ এসেছে। আমি নিজে চিড়িয়াখানায় আট বছর ধরে চাকরি করছি, এত লোক কখনো দেখিনি। কোনো কোনো সময় প্রধান গেট খুলে দিয়ে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। গেট ভেঙে ফেলবে মনে হচ্ছিল, এ রকম অবস্থা।’
জাতীয় চিড়িয়াখানায় টিকিট বিক্রি করে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। তারা চিড়িয়াখানার পরিচালককে এক লাখের বেশি টিকিট বিক্রির তথ্য জানালেও ঠিক কতসংখ্যক টিকিট বিক্রি হয়েছে, তা জানায়নি।
জাতীয় চিড়িয়াখানার সাবেক পরিচালক আবদুল লতিফ বলেন, ইজারাদার ব্যবসায়িক স্বার্থে টিকিট বিক্রির প্রকৃত তথ্য জানায় না। এটা তাদের ব্যবসায়িক কৌশল।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। চিড়িয়াখানার ভেতরে যেমন মানুষ ছিল, তেমনি বাইরেও ছিল। দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদের দিন অনেকের ব্যস্ততা থাকে। তাই সবাই বাইরে বের হতে পারে না। এতে ঈদের দ্বিতীয় দিন বেশি মানুষ বাইরে বের হয়।
পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে বিকেলে চিড়িয়াখানায় আসেন আবদুল আলিম। তিনি বলেন, ‘মেয়েরে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। সকালে গেছিলাম জাদুঘরে। বিকেলে আসলাম চিড়িয়াখানা। এখানে এসে মেয়ে আমার খুব খুশি। হরিণ দেখে সরতেই চাচ্ছিল না। মেয়ে বলে, “আব্বা আমি এখানেই থাকমু।’”
চিড়িয়াখানার সাবেক পরিচালক আবদুল লতিফ বলেন, ঢাকা শহরে চিড়িয়াখানার বিকল্প নেই। বাচ্চাকাচ্চারা পশুপাখি দেখতে চায়। বাঘ, সিংহ, বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েরা বইয়ে ছবি দেখে। তারা বাস্তবে দেখতে চায়। চিড়িয়াখানার বাইরে ফ্যান্টাসি কিংডম আছে, কিন্তু সেটার খরচ সবাই বহন করতে পারে না। সেখানে একটি পরিবার গেলে ১০ হাজার টাকার দরকার হয়। এ কারণে অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসেন।