খালেদা জিয়ার সাজা ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরানোর রাজনৈতিক ছক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২১, ২০২৩, ০৪:১২ পিএম

খালেদা জিয়ার সাজা ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরানোর রাজনৈতিক ছক

দুর্নীতির অভিযোগে দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচার ও সাজা নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক ছক ছিল বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

স্থানীয়  সময় সোমবার (২১ মার্চ) মার্কির যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈশ্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সোমবার রাতে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় আইন বিশেষজ্ঞরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ডিত হওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রমাণের ঘাটতি থাকার কথা বলেছেন। এসব আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই বিচার ও সাজা ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক ছক।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এবং লেবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সংক্রান্ত ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈশ্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশে ১৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যা বা নিরাপত্তা হেফাজতে হত্যার শিকার হয়েছে। অন্য একটি সংগঠন এ সংখ্যা ২৫ বলে উল্লেখ করেছে। তাদের মধ্যে ১০ জন গুলিতে এবং আরো ১০ জন নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহীন মিয়া নামের একজন গত নভেম্বরে নারায়ণগঞ্জে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এপ্রিলে কুমিল্লায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মোহাম্মদ রাজু নামের একজন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে গণমাধ্যম। এর কিছুদিন পর মানিকগঞ্জে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কায়সার আহমেদ নামের আরেকজনের মৃত্যুকে যুক্তরাষ্ট্র বিচারবহির্ভূত হত্যা হিসেবে তুলে ধরেছে।

মার্কিন প্রতিবেদনে মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে (অব) হত্যার বিষয়টিও উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে কক্সবাজারে একটি পুলিশ চেকপোস্টে মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে (অব.) গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বাড়াবাড়ির অভিযোগ নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়। সিনহা হত্যার রায় ছিল ক্রসফায়ারের অভিযোগে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার প্রথম রায়।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে নির্যাতন-নিপীড়নে নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। দুর্নীতিকে এখনো এ দেশের বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিভিন্ন মামলার উদাহরণ রয়েছে।

মার্কিন ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা গত বছর নিষ্পত্তি হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, বাস পোড়ানো ও বোমাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানে একটি সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে বেশির ভাগ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে-উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তাঁর আওয়ামী লীগ দল টানা তৃতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য জয়লাভ করে। ব্যালট বাক্সভর্তি এবং বিরোধী পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ অনিয়মের কারণে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বিবেচিত হয়নি।

প্রতিবেদনে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সরকারের উদ্যোগে নির্যাতন-নিষ্ঠুরতা, রাজনৈতিক কারণে বন্দি, ইন্টারনেটে ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টিসহ বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির ব্যাপক দায়মুক্তির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বা দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত, তদন্ত, বিচার এবং শাস্তির ক্ষেত্রে সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিও প্রতিবেদনে স্থান  পেয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করেছে, গত বছর রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে কয়েক হাজার বিএনপিকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা দাবি করেছেন, অনেক মামলাই রাজনেতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ।

সরকার ও আওয়ামী লীগের সমালোচক হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যমগুলো হয়রানির শিকার হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।  যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়,  সরকার ও আওয়ামী লীগের সমালোচক হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপন কাটছাঁট করা হয়েছে। এ কারণে অনেক গণমাধ্যম স্বেচ্ছায় সরকারের সমালোচনা এড়িয়ে গেছে।

বিভিন্ন নির্যাতন-হয়রানিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠন ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ সত্ত্বেও বিচার না পাওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

Link copied!